আলুর বাজার
উৎপাদন খরচের অর্ধেকই লোকসান দিতে হচ্ছে
রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে গত বছর এই সময়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন চাষিরা।
বেশি লাভের আশায় রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের অনেক চাষি গত মৌসুমে উৎপাদিত আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। চাষের জন্য আলু কেনা, জমি তৈরি, পরিচর্যা ও সবশেষে হিমাগারে রাখতে একজন চাষিকে যা খরচ করতে হয়েছে, বর্তমানে বাজারে আলু বেচে এর অর্ধেক টাকাও উঠছে না।
* প্রতি বস্তা আলুর জন্য চাষির খরচ হয়েছে ৮৫০ টাকা। * পাইকারি বাজারে সে আলুর দাম ৪০০ টাকা।
দুই উপজেলার চাষি ও হিমাগারের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন ও হিমাগারের ভাড়াসহ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলুর জন্য চাষির খরচ হয়েছে সাড়ে আট শ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে সে আলুর দাম ৪০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুর দাম মাত্র ৮ টাকা। বিপরীতে বছরের এই সময়টায় শাক–সবজির চাহিদা বেশি থাকায় সেগুলোর ভালো দাম মিলছে।
আলু তোলার মৌসুমের সময় প্রতি কেজির দাম ছিল ১৩ থেকে ১৪ টাকা। অনেকেই বেশি দামের আশায় তখন বিক্রি না করে আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। এমনই একজন তারাগঞ্জের ইকরচালি দোলাপাড়া গ্রামের চাষি মাহুবার হোসেন (৬১)। গত মৌসুমে আলুর বীজের দাম ছিল বেশি। মাহুবার এক একর জমিতে কার্ডিনাল জাতের আলুর চাষ করতে খরচ করেন ৭৯ হাজার টাকা। ঘরে তোলেন ১৩০ বস্তা আলু (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি)। তখন বাজারে আলুর দাম ছিল ১৩ টাকা কেজি। মাহুবার বলেন, ‘তখন না বেচেয়া লাভের আশাত স্টোরোত (কোল্ড স্টোরেজ) থুইনো। এ্যালা দাম করোচে ৮ টাকা কেজি। লাভ তো দূরের কথা আসল থাকিও নাই। হামরা বাঁচমো কেমন করি!’
উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে তারাগঞ্জে ৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও বদরগঞ্জে ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টরে আলুর চাষ হয়। দুই উপজেলার ছয়টি হিমাগারে আলু রাখা হয় প্রায় আট লাখ বস্তা। এখনো মজুত আছে প্রায় ছয় লাখ বস্তা।
কৃষি বিভাগের দুজন কর্মকর্তা ও সাতজন আলুচাষি জানান, গত বছর এই সময়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন চাষিরা। ২০১৪ সালেও আলু হিমাগারে রেখে লাভবান হয়েছিলেন তাঁরা। মাঝের বছরগুলোতেও আলু চাষ করে চাষিরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি।
এদিকে অনেক চাষিই আলু রেখে হিমাগারমালিকদের কাছে থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। আলু নিতে চাইলে এখন সে ঋণও শোধ করতে হবে। তারাগঞ্জের এন এন হিমাগারের ব্যবস্থাপক ডালিম মিয়া বলেন, তাঁর হিমাগারে আলু ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার বস্তা। এখনো পড়ে আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার বস্তা। প্রতি বস্তার বিপরীতে চাষিদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল ২৫০ টাকা করে। বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে চাষিরা হিমাগারের ধারেকাছেও ঘেঁষছেন না।
তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল। তাই চড়া দামে বীজ কেনায় আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছিল বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় শাকসবজির আবাদ ভালো হয়েছে। আলুর তুলনায় শাক–সবজির চাহিদাও এখন বেশি।