সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার কাঞ্জার হাওর গ্রুপ জলমহালটির ইজারা মূল্য পরিশোধ না করে সেখান থেকে দেড় মাস ধরে অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এ ছাড়া জলমহালটির সীমানার বাইরেও স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে পাঁচটি গ্রামের তিন শতাধিক জেলে পরিবার বিপাকে পড়েছে।
উপজেলার সুখাইড় শাপলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মাসুদ মিয়ার নির্দেশে বেআইনিভাবে এ মাছ শিকার চলছে। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ টাকার মাছ শিকার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জেলেরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের জানিয়ারচর গ্রামের সামনে কাঞ্জার হাওর গ্রুপ জলমহালটির অবস্থান। এটি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন। এর আয়তন ৬১ একর ৩৪ শতক। ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল) থেকে ৫ বছরের জন্য সুখাইড় শাপলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড এই জলমহাল ইজারা পায়। এ জন্য তাদের বছরে ১২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সুখাইড় শাপলা সমিতি এ টাকা এখনো পরিশোধ করেনি।
জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কাঞ্জার হাওর গ্রুপ জলমহালে ইজারা মূল্যের একটি টাকাও এখনো ইজারাদার পরিশোধ করেনি। পাওনা পরিশোধের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ইজারা মূল্য পরিশোধ না করেই আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওই সমিতির লোকজন জলমহালটি নিয়ন্ত্রণে নেন। সমিতির লোকজন বাঁশ ও গাছের ডালপালা ভেঙে ফেলেন এবং তিনজন পাহারাদার নিয়োগ করেন। দেড় মাস ধরে সেখানে মাছ শিকার চলছে। আশপাশের রাজধরপুর, জানিয়ারচর, দেওলা, মহদীপুর ও কুড়ের পাড়—এই পাঁচ গ্রামের তিন শতাধিক জেলে এ জলমহালের ওপর নির্ভরশীল। এ জলমহালের সীমানার বাইরে মাছ শিকার করতে গেলেও ইজারাদারের লোকজন তাঁদের বাধা দিচ্ছেন।
মহদীপুর ও রাজধরপুর গ্রামের তিনজন জেলে বলেন, সমিতির সভাপতি মাসুদ মিয়ার লোকজন দেড় মাস ধরে খনা জাল, কারেন্ট জাল দিয়ে জলমহালটি থেকে এই পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকার মাছ শিকার করিয়েছেন। এ ছাড়া জলমহালের নিয়োজিত পাহারাদারেরা তাঁদের জলমহালের সীমানার বাইরেও মাছ ধরতে দিচ্ছেন না।
জলমহালের ইজারা মূল্য পরিশোধ না করে সেখান থেকে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। জলমহালের কোনো অংশ কারও কাছে বিক্রি করা যাবে না।মো. মুনতাসির হাসান, ইউএনও, ধরমপাশা
জেলেরা অভিযোগ করেন, জলমহালের কোনো অংশ বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও দুরগুল্লা (একটি বড় ডোবা) অংশটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে জানিয়ারচর গ্রামের শফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা শিগগিরই এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, জলমহালটি যারা ইজারা পেয়েছে, তাদের কাছ থেকে তিনি কাঞ্জার দুরগুল্লা অংশটি কিনেছেন। জলমহাল নিয়ে কোনো সমস্যা হলে সমিতির লোকজন তাঁর টাকা ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন।
সুখাইড় শাপলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মাসুদ মিয়া বলেন, তাঁরা মাছ শিকার করছেন না। জলমহালের সীমানায় যাতে কেউ মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্য পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। সীমানার বাইরে কাউকে মাছ ধরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আর তিনি কারও কাছে জলমহালটির কোনো অংশ বিক্রি করেননি। জলমহালটির খাজনা পরিশোধের জন্য তিনি দুটি চিঠি পেয়েছেন। কিন্তু সমিতির আর্থিক সমস্যা থাকায় জলমহালটির খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন না।
ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান বলেন, জলমহালের ইজারা মূল্য পরিশোধ না করে সেখান থেকে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। জলমহালের কোনো অংশ কারও কাছে বিক্রি করা যাবে না। এটি জলমহালের নীতিমালা পরিপন্থী। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বলেন, যেসব জলমহালের ইজারা মূল্য এখনো পরিশোধ করা হয়নি, সেগুলোর ইজারা বাতিল করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।