২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

অস্ত্রধারীরা চাকরিজীবী-ফুলবিক্রেতা-গাড়িচালক-জমির দালাল: র‌্যাব

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় অস্ত্রধারী আট সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁরা আসামিদের শনাক্ত করেন। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাসির উদ্দিন (৩১), মো. কায়েস (২২), মো. মোরশেদ (২৬), কোরবান আলী (৩৭), মো. ইসমাঈল (৫৫), মো. জসিম (২৪), মো. মিন্টু (২৬) ও মো. নুরুল আবছার (৩৩)। তাঁদের চট্টগ্রাম মহানগর, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও ঢাকা মহানগরে তেজকুনীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা র‌্যাবকে সহিংসতায় ব্যবহৃত তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২টি গোলাবারুদ খাগরিয়া থেকে বের করে দেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কায়েস, নাসির, মোরশেদ, আবছার ও মিন্টুর বিরুদ্ধে আগেও সাতকানিয়া থানায় মামলা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের দুই প্রার্থীর সমর্থক বলে স্বীকার করেছেন। এ দুই প্রার্থী হলেন নৌকার প্রার্থী মো. আক্তার হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জসিমউদ্দিন।

৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউপি নির্বাচনে অস্ত্রবাজির ঘটনায় দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন। বেশ কয়েকটি মামলাও করা হয়। এরপরই র‌্যাব সদর দপ্তরের নেতৃত্বে র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে।
আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও প্রার্থীদের ব্যাপারে র‌্যাব তদন্ত করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, তাঁদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।

র‌্যাব বলেছে, সহিংসতায় নেতৃত্বে ছিলেন মূলত নাসির উদ্দিন ও মো. কায়েস। কায়েস এই অস্ত্র একজনের কাছ থেকে ভাড়ায় এনেছিলেন। সহিংসতায় ব্যবহৃত বিদেশি অস্ত্র ভারত থেকে আসা বলে জানায় র‌্যাব।

১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে র‌্যাব-১৫-এর অভিযানে বান্দরবান সদর থেকে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারী নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে মো. মোরশেদ, কোরবান আলী ও মো. ইসমাঈলকে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাই পরে সহিংসতায় ব্যবহৃত অস্ত্র বের করে দেন। ওই রাতেই র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম মহানগর থেকে মো. জসিমকে গ্রেপ্তার করে। জসিমের দেওয়া তথ্যানুসারে চট্টগ্রামের চান্দনাইশ থেকে গ্রেপ্তার হন মো. মিন্টু। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার ভোরে র‌্যাব-২ ঢাকার তেজকুনীপাড়া থেকে মো. কায়েস ও তাঁর সহযোগী মো. নুরুল আবছারকে ধরে ফেলে।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মো. কায়েস দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এর বাইরেও তিনি নিয়মিত সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। এলাকায় তাঁর ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আছে। তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় তাঁর নেতৃত্বেই জসিম, মোরশেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরও শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালান। এরপরই তিনি ঢাকায় চলে এসে আত্মগোপন করেন।

নাসির নির্বাচনের দিন মেরুন রঙের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙের মাস্ক পরে একটি একনলা বন্দুক হাতে নেমেছিলেন। তিনিও একটি প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। তিনি ২০১২ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। ফিরে এসে প্রথমে ঢাকার শাহবাগে ফুল বিক্রি করতেন। নির্বাচনের দিন তিনিও সশস্ত্র একটি দলের নেতৃত্ব দেন। নির্বাচন পণ্ড হয়ে গেলে নাসির বান্দরবানের গহিন জঙ্গলে আত্মগোপন করেন।
আবছার ঢাকায় কাভার্ড ভ্যান সমিতির ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যখনই সাতকানিয়ায় কোনো সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন তিনি ঢাকা থেকে চলে যান। এবারও তিনি ঢাকা থেকে সাতকানিয়াতে চলে যান। কায়েসের নির্দেশে আবছার সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে নির্বাচনের সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেন। পরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন ও আত্মগোপন করেন। তিনি কায়েসকেও আত্মগোপনে থাকতে সহায়তা করেন।

কায়েসের দলের অন্যতম সদস্য মোরশেদ পেশায় একজন সিএনজি চালক। তাঁকে ঘটনার দিন একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা যায়। গ্রেপ্তার জসিম খাগরিয়ার বাসিন্দা ও পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে অংশ নেন। সহিংসতার সময় লাল জ্যাকেট পরে কার্তুজের একটি বস্তাসহ তাঁকে মোরশেদের পাশে দেখা যায়। সহিংসতার পর তিনি চট্টগ্রাম মহানগরে আত্মগোপন করেন।

মিন্টু পেশায় গাড়িচালক। ১৩-১৪ বছর ধরে মিন্টু চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে আসছেন। কায়েসের নির্দেশে মিন্টু অস্ত্র পরিবহন করেন। এ ছাড়া সহিংসতার উদ্দেশ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন বহিরাগতকে বিভিন্ন পরিবহনে করে তিনি নিয়ে আসেন। সহিংসতার সময় তাঁর হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। কোরবান আলী পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি সহিংসতাকারীদের লাঠিসোঁটা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করেন বলে জানায় র‌্যাব। তাঁর বাসা থেকে র‌্যাব দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।

এ ছাড়া ইসমাঈল পেশায় একজন জমির দালাল। আগে রংপুর থেকে তামাক সংগ্রহ করে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন। তিনি খাগরিয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় লাঠিসোঁটা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন বলে জানায় র‌্যাব।