ইউল্যাব উপাচার্য দায়িত্ব পালনে বিরত থাকবেন, আন্দোলন থেকে সরলেন শিক্ষার্থীরা

ইউল্যাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভছবি: প্রথম আলো

তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠনের শর্তে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীরা। ওই কমিটির করা তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ইউল্যাব উপাচার্য ইমরান রহমান দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। ৩ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদের মধ্যস্থতায় ইউল্যাব প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার লে. কর্নেল (অব.) ফয়জুল ইসলাম ও আন্দোলনকারীদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অনশনকারী ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিবলী সাদিক ও ইবতেশাম চৌধুরী অনশন ভাঙেন। তাঁরা দুজনেই অনশন ভাঙার কথা প্রথম আলোর কাছে জানিয়েছেন।

ইউল্যাব উপাচার্য ইমরান রহমান এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে অনশনসহ দুই দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ইউল্যাব উপাচার্যের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে অসম্মান এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ এনেছেন। আর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর এবং দুর্নীতি’র অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থীরা।

ইউল্যাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন আসিফ মাহামুদ প্রথম আলোকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারীরা আলোচনায় মোট ছয়টি সিদ্ধান্ত এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা এই ছয় সিদ্ধান্তে একমত হয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সইও করেছেন। ইউল্যাব প্রশাসনের পক্ষে তাতে রেজিস্ট্রার সই করেন।

ছয় সিদ্ধান্তের প্রথমটি হলো শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ইউল্যাবের উপাচার্য ইমরান রহমান দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। পুরো প্রক্রিয়ায় তদন্ত কমিটি ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। উপ–উপাচার্য শুধু কার্য সম্পাদন করবেন।

অন্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্য ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতার অংশীদার কারও পক্ষে কোনো ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আপত্তিকর গ্রাফিতির জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং আপত্তিকর লেখাগুলো নিজ দায়িত্বে মুছে ফেলার ব্যাপারে একমত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি আন্দোলনকারীরা তাঁদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ৩ জানুয়ারি থেকে যথারীতি চলমান থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গ্রাফিতি অঙ্কনের কারণে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করছে।

গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ইউল্যাব ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকায় গত রোববার দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ই–মেইল করে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল বুধবার থেকে আন্দোলনে নামেন ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার পর রাজধানীর বছিলায় ইউল্যাবের মূল ফটকের সামনে শিবলী সাদিক ও ইবতেশাম চৌধুরী আমরণ অনশন শুরু করেন। দুজনের পাশাপাশি বেশ কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখা সংবলিত পোস্টারও তাঁদের হাতে ছিল।

এ অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে বছিলার ইউল্যাব ক্যাম্পাসে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই দুই নেতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপে অংশ নেন। এর মধ্যে উমামা ফাতেমা রাত আটটার দিকে সেখান থেকে চলে যান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবদুল হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে সমঝোতা হয়।