প্রাথমিক ধাপে শনাক্ত হলে স্তন ক্যানসারে অস্বাভাবিক মৃত্যুর আশঙ্কা নেই
অক্টোবর মাস ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার মাস। এ উপলক্ষে এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। গত ২৮ অক্টোবর পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
উপস্থাপক নাসিহা তাহসিনের সঙ্গে এ পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. এ টি এম কামরুল হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক বলেন, ‘এ বছর স্তন ক্যানসার মাসের প্রতিপাদ্য হলো স্তন ক্যানসার কারওরই একা মোকাবিলা করা উচিত না। স্তন ক্যানসার মাসের মূল উদ্দেশ্য তিনটি—সচেতনতা বৃদ্ধি করা, স্তন ক্যানসার নিয়ে ভুল ধারণা দূর করা এবং এটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া।’
‘এখনো আমাদের দেশে তেমনভাবে ক্যানসার রেজিস্ট্রি নেই। এরপরও আমরা জানি, প্রতিবছর প্রায় ১৩ লাখ রোগী বাংলাদেশে শনাক্ত হচ্ছে। প্রতি আটজনের মধ্যে একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।’
এরপর তিনি ডা. এ টি এম কামরুল হাসানের কাছে বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় এবং বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসা-সুবিধা নিয়ে জানতে চান।
ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশে তেমনভাবে ক্যানসার রেজিস্ট্রি নেই। এরপরও আমরা জানি, প্রতিবছর প্রায় ১৩ লাখ রোগী বাংলাদেশে শনাক্ত হচ্ছে। প্রতি আটজনের মধ্যে একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।’
ডা. এ টি এম কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘বিশ্বে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারটা এক নম্বর রোগ। যদিও আমাদের দেশে সার্ভিক্যাল ক্যানসারটাকে এক নম্বর রোগ বলে গণ্য করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে ব্রেস্ট ক্যানসারের সংখ্যা অনেক। ফুসফুস ক্যানসারের পর ব্রেস্ট ক্যানসারে মৃত্যুর হারটাই কিন্তু বেশি।’
স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘স্তনে ব্যথাবিহীন চাকা থাকাটা ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বগলে চাকা থাকতে পারে। এই চাকা চাপ দিলে অনেক সময় বিজাতীয় তরল পদার্থ বের হয়। স্তনে ও বগলে ঘা হতে পারে, লালচে হয়ে যেতে পারে। অনেকটা কমলালেবুর বাইরের অংশের মতো খসখসে ভাব স্তনে চলে আসতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যথাবিহীন চাকাটাই প্রথম ওয়ার্নিং সাইন। এটা শনাক্ত করা গেলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়।’
এ ক্ষেত্রে সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশনটা কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘স্ক্রিনিং, স্ক্রিনিং এবং স্ক্রিনিং—এ ছাড়া ক্যানসার আর্লি স্টেজে শনাক্ত করার আর কোনো উপায় নেই। বাইরের দেশে ব্রেস্ট ক্যানসারে মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে, কারণ সেখানে সেলফ স্ক্রিনিংটা বহুলভাবে প্রচলিত।’
এ প্রসঙ্গে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে স্ক্রিনিংটা বহুলভাবে পরিচিত হয়নি। অল্প কিছু জায়গায় সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। এরপরও আমি বলব, মেয়েদের বয়স ২০ বছরের পরেই নিজেদের স্তনটা একটু পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এ ছাড়া তিন বছর পর পর কোনো একজন স্পেশালিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।’
এ ছাড়া যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদেরও ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে ক্যানসারের পরীক্ষা করা উচিত বলে জানান তিনি। ৪৪ বছর থেকে ৭৪ বছর বয়স পর্যন্ত এই পরীক্ষাগুলো বাধ্যতামূলক।
মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘যাঁদের লেট প্রেগনেন্সি হয়, লেট মেনোপজ হয়, তাঁদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিটা একটু বেশি!’
‘যারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়াদাওয়া করে, তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ওজন বেশি থাকলে এই ঝুঁকিটা দেড় গুণ বেশি হয়। লো কার্বোহাইড্রেট, লো প্রোটিন, শারীরিক চর্চা এই ঝুঁকিটা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।’
উপস্থাপক জানতে চান, ‘স্তন ক্যানসার মানেই মৃত্যু—এটা ভ্রান্ত ধারণা নাকি সত্যি?’
উত্তরে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘স্তন ক্যানসার হলেই যে মৃত্যু হবে তা নয়। আবার চিকিৎসা না নিলেও যে আমি ভালো থাকব, ব্যাপারটা এ রকমও নয়। আর্লি স্টেজে অর্থাৎ প্রাথমিক ধাপে যদি স্তন ক্যানসার শনাক্ত করা যায়, তাহলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বললেই চলে।’
খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘যারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়াদাওয়া করে, তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ওজন বেশি থাকলে এই ঝুঁকিটা দেড় গুণ বেশি হয়। লো কার্বোহাইড্রেট, লো প্রোটিন, শারীরিক চর্চা এই ঝুঁকিটা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।’
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার কী কী পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চারটি পদ্ধতি এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রচলিত—সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি। স্টেজ অনুযায়ী এসব পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা, প্ল্যানিং প্রটোকল ইত্যাদি চেঞ্জ হতে থাকবে।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে।
পুরুষদের স্তন ক্যানসারের ওপর নির্দিষ্ট কোনো গবেষণা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘সারা বিশ্বে ১ শতাংশ পুরুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসাপদ্ধতি একই রকম। পুরুষেরা জেনেটিক কিছু কারণে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি বুকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রেও পুরুষদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’