মানহানিসহ ড. ইউনূসের নামে করা ছয় মামলার কার্যক্রম বাতিলের রায় প্রকাশ
শ্রম আইনের পাঁচটি ও মানহানির অভিযোগে একটিসহ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে করা পৃথক ছয়টি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা প্রকাশিত হয়েছে।
ড. ইউনূস বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। পৃথক মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ড. ইউনূসের করা পৃথক ছয়টি আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৪ অক্টোবর ওই রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি সম্প্রতি হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর ভাষ্যমতে, ড. ইউনূসের নামে যখন শ্রম আদালতে পৃথক পাচটি মামলা হয়, তখন তিনি গ্রামীণ টেলিকমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়ন ঘিরে কর্মীর চাকরিচ্যুতির অভিযোগ তুলে ২০১৯ সালে এসব মামলা করা হয়। এর আগে এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মানহানির অভিযোগে ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূসের নামে অন্য মামলাটি করা হয়।
মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ২০১১ ও ২০১৯ সালে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে রুলসহ আদেশ দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৪ অক্টোবর রায় দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বিষয়টি সামনে আসে।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান। জানতে চাইলে আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম আইনে পাঁচটি ও মানহানির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছিল। গ্রামীণ টেলিকমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী শ্রম আইন অনুযায়ী ফৌজদারি একটি মামলা করেন।মামলার ভাষ্য এরকম—প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়নের অফিস বিয়ারার থাকা অবস্থায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এই মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে দেওয়া রুল গত ২৪ অক্টোবর হাইকোর্ট অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করেন। ড. ইউনূস ও নাজনীন সুলতানার বিরুদ্ধে এ ধরনের মোট পাঁচটি মামলা হয়। পাঁচটি মামলার কার্যক্রমই বাতিল হয়েছে।
মামলার কার্যক্রম বাতিলের পক্ষে যুক্তি সম্পর্কে এই আইনজীবী বলেন, ‘যুক্তি ছিল, প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়নের আবেদনপত্র ইতিমধ্যে শ্রম অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সুতরাং এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই যে প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়েনের সদস্য হওয়ার কারণে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ছিল, চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে শ্রম অধিদপ্তরকে মামলা করতে হয়। তাঁরা শ্রম অধিদপ্তরের কাছে নালিশ করেছিলেন বটে। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তর এ ধরনের কোনো মামলা করেনি। যুক্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে আদালত এসব মামলা বাতিল করেছেন।
মামনহানির অভিযোগে করা অন্য মামলা সম্পর্কে ড. ইউনূসের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতবিদেরা টাকার জন্য রাজনীতি করেন, জনস্বার্থে করেন না’—২০০৭ সালে এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন একটি বক্তব্য ধরে জাসদের যুগ্ম সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা বারের সদস্য নজরুল ইসলাম চুন্নু মানহানির মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট এই মামলাও বাতিল করেছেন। ফলে ড. ইউনূস ছয়টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন।