পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও মার্কিন প্রতিবেদনে আসেনি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিফলিত হয়নি। দেশটির প্রতিবেদনে অন্যান্য বারের মতোই অনেক বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত সোমবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
লিখিত বক্তব্যে সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘আমরা যতই আকাঙ্ক্ষা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে যে ক্ষেত্রগুলোতে আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলোর প্রতি লক্ষ রেখে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, সরকারের প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্কদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সমাবেশ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এত অর্জন সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় হলো, মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন স্বীকার করা হয়নি। এ ছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তিনি গৃহবন্দী নন বলে মন্তব্য করেছেন সেহেলী সাবরীন। তিনি বলেন, এটাও স্পষ্ট যে প্রতিবেদনে বেশির ভাগ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (বেনামী সূত্রসহ) থেকে অনুমাননির্ভর তথ্য নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব সংস্থার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পরিচালিত। এ কারণে প্রতিবেদনে স্বাভাবিকভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি সঠিক নয়। অথচ বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের সংঘটিত সহিংসতা ও ভাঙচুর যে প্রায়ই সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করে, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে এবং সম্পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপের পরও প্রতিবেদনে এ বিষয়ে রাষ্ট্র বা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাহ্য করে অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। একইভাবে শ্রম অধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো, বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। অথচ এগুলো নিয়ে একাধিকবার দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় ফোরামে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, প্রতিবেদনটি স্বাধীন বিচার বিভাগ ও কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল্যবান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি লক্ষ করেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাঠামো, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও অংশীজনদের সঙ্গে সব নাগরিকের মানবাধিকারের সম্পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে যুক্ত থাকার বিষয়ে আগ্রহী বাংলাদেশ।