আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ ৪ জনই দোষী

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্তকরণ (কনভিকশন) ও সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশ বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বুধবার ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে করা এক আবেদনের (ফৌজদারি রিভিশন) চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৮ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চারজনের (ড. ইউনূসসহ চার কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে দেওয়া কনভিকশন (দোষী সাব্যস্তকরণ) কার্যকর থাকবে। আপিল বিচারাধীন অবস্থায় কনভিকশন স্থগিত করার কোনো বিধান নেই। আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে কেবল এই কনভিকশন বাতিল, বহাল ও সংশোধন হতে পারে।

রায়ে বলা হয়, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে চারজন জামিন পেয়েছেন। তাঁদের সাজা (সেনটেন্স) স্থগিত করার কোনো প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না, জামিন পাওয়ার পর তাঁদের সাজা–সংক্রান্ত আদেশ স্বয়ংক্রিয় ও আরোপিতভাবে স্থগিত আছে। তাই যতক্ষণ তাঁরা জামিনে আছেন, সাজা স্থগিত থাকবে। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শ্রম আদালতের দেওয়া জরিমানা স্থগিত থাকবে। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান যত দ্রুত সম্ভব আপিল (ড. ইউনূসসহ চার কর্মকর্তার করা) নিষ্পত্তি করবেন। দেশের বাইরে গেলে তাঁদের (ইউনূসসহ চারজন কর্মকর্তা) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এই মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। গত ১ জানুয়ারি এই রায় দেওয়া হয়।

দণ্ডিত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এই আপিল সেদিন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায় ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে চারজনকে জামিন দেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।

এ অবস্থায় তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশের অংশবিশেষের বৈধতা নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন মামলার বাদী কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক।

বাদীর এই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত গত ১৮ মার্চ কয়েকটি দিক বিবেচনায় রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেয়েছি। হাইকোর্টের রায়ের কপি পাওয়া সাপেক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল শুনানির জন্য আরজি জানানো হবে।’

অবশ্য মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি চাওয়া হলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে তা দেওয়া হয়নি। অনুলিপি না পাওয়ায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।