নির্বাচনের দিন মাগুরায় নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বিএনপি, দাবি পুলিশের
৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাগুরায় নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার মো. মশিউদ্দৌলা রেজা এ দাবি করেন।
ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর মুঠোফোন বিশ্লেষণ করে এমন পরিকল্পনার কথা জানা গেছে বলে জানান পুলিশ সুপার। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির নেতারা বলছেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট ইস্যু তৈরি করে বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালানোর কৌশল খুঁজছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ১৩ ডিসেম্বর সদর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. সজীব শেখকে (৩১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের পুলিশ লাইনস বাঁশতলায় নিজ বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং ২০২০ নভেম্বরে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা বিচারাধীন।
পুলিশ সুপার মো. মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, ওই আসামিকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাঁর একটি মুঠোফোন জব্দ করে। ওই মুঠোফোনের একটি গ্রুপ কল থেকে পুলিশ জানতে পারে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সব নেতা-কর্মীর ঢাকা থেকে মাগুরায় চলে আসতে ও হরতাল জোরদার করার জন্য বলা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনের দিন ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না যেতে পারেন, সে জন্য জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে সাউন্ড গ্রেনেড, চকলেট বোমা, পটকা, নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হাতবোমা সংগ্রহের পরিকল্পনা চলছিল।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি করে হাতবোমা বিস্ফোরক, গুলতি ও কাচের বল দিয়ে হামলা, বিশেষ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পুলিশের ওপর গুপ্ত হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, ওই কথোপকথনের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পেরেছেন, এ কাজের জন্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। বাকি টাকা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ ও সদস্য মনোয়ার হোসেন খান দেবেন বলে দাবি করা হয়।
জেলা বিএনপির সদস্য মনোয়ার হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের এমন কোনো পরিকল্পনা বা আলোচনা করার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁরা গণতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। গত আড়াই মাস কোনো নেতা-কর্মী বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে এমন আত্মঘাতী পরিকল্পনা বিএনপি করবে না। তিনি দাবি করেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আরও বেশি দমন–পীড়ন চালানোর কৌশল হিসেবে এমন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতার ভাই শেখ কাজল আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁর ভাইকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে আমার ভাই কোনো নাশকতা কাজের সঙ্গে যুক্ত নেই। আমি নিজে সাকিব আল হাসানের (মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী) নির্বাচন করছি। ও বাড়িতেই থাকত। মোবাইলে কী হয়েছে, বেশি কিছু জানি-বুঝি না।’
পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতাকে আজ বিকেলে ১৩ ডিসেম্বরের মামলার আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রোববারের নির্বাচন উপলক্ষে জেলায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য কাজ করছেন। যেকোনো ধরনের নাশকতা মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত আছেন।