‘সাম্প্রদায়িক হামলা হতে থাকলে গণতন্ত্র ব্যর্থ হবে’

দেশব্যাপী হিন্দু নির্যাতন, মঠ-মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। আজ বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে কলেজছাত্র উৎসব মণ্ডলকে হত্যাচেষ্টাসহ দেশব্যাপী সংখ্যালঘু নির্যাতন, মঠ-মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন চট্টগ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষেরা। আজ শনিবার বিকেলে নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর কথা দিয়েছিলেন, সনাতনী সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রায় এক মাস হচ্ছে; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় একটি দাবিও মেনে নেওয়া হয়নি, বাস্তবায়িত হয়নি।’

চিন্ময় দাস আরও বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলা হতে থাকলে বাংলাদেশের স্বাভাবিক মর্যাদা, অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ও গণতন্ত্রের বিকাশমান ধারা—এগুলো কোনো কিছুই থাকবে না। এসব ঘটনায় সনাতনীরা খুবই আতঙ্কগ্রস্ত। তবে স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, আমরা দাবি আদায়ের জন্য প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব, দুর্গাপূজার মধ্যেও আমরা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব।’

চিন্ময় দাস বলেন, খুলনায় আজ উৎসব মণ্ডল মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। উৎসব অপরাধ করলেও তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া যেত। তাকে বিচার আওতায় নেওয়া যেত। সেই ছেলেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনে আক্রমণ করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকা দিয়ে গণেশ প্রতিমা নেওয়ার সময় গরম পানি ছুড়ে মারা এবং এর পরের উদ্ভূত ঘটনার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী। তিনি সব মঠ–মন্দিরে ভাঙচুর ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার দাবি করেন।

আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ, সনাতনী জাগরণী সংঘের সভাপতি কাঞ্চন আচার্য, জাগো হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক টিপু শীল, যীশুময় দে প্রমুখ। পরে একটি মিছিল বের করা হয়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশ কমিশনার

এদিকে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিএমপির পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ আজ সন্ধ্যায় চেরাগী পাহাড় মোড় পরিদর্শন করে বিক্ষোভরত জনগণ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি৷ এ সময় সেখানে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান উপস্থিত ছিলেন।

সিএমপি কমিশনারের আশ্বাসে বিক্ষোভরত জনতা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ করে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন। এর আগে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।