শীতের মধ্যেও ঢাকার বাইরে চলছে লোডশেডিং
শীত মৌসুমে তুলনামূলক কম বিদ্যুৎ–চাহিদার সময়ও টানা দুই দিন ধরে চলছে লোডশেডিং। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হলেও আজ মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় আজও লোডশেডিং হয়েছে একাধিকবার। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এটি জানা গেছে, উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ্বালানি তেলচালিত বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই কয়লা ও গ্যাসচালিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় সরবরাহ–ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। গতকাল হঠাৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এ কেন্দ্র থেকে। এখনো এটি পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ভোলা ও বরিশালের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও উৎপাদন কমে গেছে গতকাল। এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। গড়ে ওই সময় ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। এখন শীতের সময় বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াটে। অথচ এটা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গতকাল সকালে ১ কাজার ১০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। এতে রাজধানী ঢাকার মানুষও ভুগেছে বিদ্যুতের অভাবে। আজও এক হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি লোডশেডিং হয়েছে।
ঢাকার একাংশের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির কাউসার আলী এবং আরেক অংশের বিতরণ সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় রাজধানীর কোথাও লোডশেডিং করতে হয়নি।
তবে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ পাচ্ছে। বিদ্যুতের গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশ তাদের অধীনে। গতকাল রাতে সর্বোচ্চ ৬০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করেছে তারা। আজও দিনে ৬০০ মেগাওয়াট ও রাতে ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে সংস্থাটির। গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী এ সংস্থার আওতায় কোনো কোনো এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। এ ছাড়া সিলেট শহরেও আজ একাধিকবার লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রামপাল, ভোলা ও বরিশালের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন কমে গেছে। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে এখন তরল জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা সাত হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আজ দিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের মতো। কয়েক মাসের বিল বকেয়া থাকায় বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে রাজি হচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ৬ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি ধরে সরকারের ভর্তুকির পাশাপাশি দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাহলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেটি দিতে পারছে না। প্রাথমিক জ্বালানির অভাব, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া—এমন পরিস্থিতিতে লোডশেডিং করে দাম বাড়ানো হবে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা।