'ইরানি জিরা' চাষ করে কৃষকের মাথায় হাত
অধিক মুনাফা লাভের আশায় ‘ইরানি জিরা’ আবাদ করেছিলেন মাগুরার চার উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক। কিন্তু ফলন হওয়ার পর কৃষক বুঝতে পারেন এগুলো জিরা নয়।
আঞ্চলিক মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকেরা জিরা মনে করে আগাছাজাতীয় ‘সলুক’ চাষ করেছেন। সলুক ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে এর চাহিদা ও বাজারমূল্য নেই বললেই চলে। কোনো অবস্থাতেই সলুক জিরার বিকল্প ও রান্নার উপযোগী নয়।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাশের জেলা নড়াইল সদরের নাজমুল ইসলাম ইরানের খামার থেকে গোপনে দেশে ওই জিরার বীজ এনেছেন বলে কৃষকদের কাছে প্রচার করেন। তিনি কথিত ইরানি জিরার ২৫০ গ্রাম বীজ ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। কৃষকদের তিনি বলেছিলেন, এই বীজ থেকে তাঁরা অন্তত ১০ লাখ টাকার জিরা ও বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। পরে আর নাজমুলের কোনো হদিস পাননি কৃষকেরা।
কৃষক সূত্রে জানা যায়, মাগুরা সদর, মহম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক জিরা মনে করে সলুকের আবাদ করেন। নতুন ‘জিরা’ চাষের খবর ছড়িয়ে পড়লে তা দেখতে খেতের আলে ভিড় করেন উৎসুক কৃষক ও লোকজন। কৃষকেরাও ফলন দেখে মহাখুশি। একপর্যায়ে খবর পৌঁছায় মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁরাই নিশ্চিত করেন এটি জিরা নয়, সলুক। কথিত ইরানি জিরার গাছ ৪ থেকে ৫ ফুট উঁচু হয়েছিল। বড় গুচ্ছে হলুদ ফুল ধরেছিল। পরে ফল পরিপক্ব হলে কৃষকেরা দেখতে পান এর দানা জিরার চেয়ে অনেক বড়।
মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের কৃষক আকতারুজ্জামান মৃধা ২১ শতাংশ জমিতে, কালিশংকরপুর গ্রামের চাষি চান্দু মোল্লা ১৫ শতাংশ জমিতে, খলিশাখালীর তৈয়ব বিশ্বাস ৩ শতাংশ জমিতে, রামদেবপুরের খবির হোসেন ও মতিয়ার মোল্লা ১২ শতাংশ জমিতে, সালধা গ্রামের অসিম গয়ালী ৬ শতাংশ জমিতে এই ‘জিরা’রচাষ করেন।
কৃষক আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নড়াইল থেকে ৩০০ গ্রাম ‘ইরানি জিরার’ বীজ ৬ হাজার টাকায় কিনে ২১ শতাংশ জমিতে বোনেন তিনি। ভালো ফলন হলেও এর কোনো চাহিদা নেই জানার পর তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
মহম্মদপুর কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকেরা ব্যক্তি উদ্যোগে বীজ সংগ্রহ করে কথিত জিরার আবাদ করে প্রতারিত হয়েছেন। নতুন করে কোনো কৃষক যেন প্রতারিত না হন, সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মাগুরা মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশের মাটি জিরা চাষের উপযোগী নয়। প্রকৃত জিরার ফুল সাদা ও সবুজাভ হয়। গাছের উচ্চতা হয় সর্বোচ্চ ২ ফুট। জিরার নামে আবাদ করা মসলা জাতীয় আগাছা সলুকের ফুল হলুদ ও গাছের উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়েছে।’