'অনুসন্ধান বা তদন্ত নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না কেন?'
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, যেসব কর্মকর্তা ঘুষ খান কিংবা দুর্নীতি করেন, তাঁরা যেমন অসৎ, আবার যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন না কিংবা করতে পারেন না, তাঁরাও অসৎ। আজ রোববার সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিপূর্ণভাবে ডকুমেন্ট তথা কাগজনির্ভর। আবার দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুসারে অনুসন্ধান বা তদন্তকাজে কমিশনের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। যেকোনো ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্তসংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহ করার জন্য আইনি নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। কেউ এই নির্দেশ পালন না করলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় প্রকার দণ্ড প্রদানের বিধানও রয়েছে। তারপরও কেন কমিশনের অনুসন্ধান বা তদন্ত আইন অনুসারে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না? কেন কিছু কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারছেন না? এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই নিতে হবে।
ইকবাল মাহমুদ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নিজে দুর্নীতিমুক্ত না থাকলে এবং চলন-বলনে তথা আচরণের উৎকর্ষ না থাকলে কেউ শ্রদ্ধা করে না। এটাও সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। চেয়ারম্যান বলেন, সবাই পদোন্নতি পেতে চান, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চান না। কমিশন ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দিয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এখন সমন্বিতভাবে কাজ করার সময়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত কাজের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘সময়াবদ্ধ কালের মধ্যে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করার ব্যর্থতার জন্য কেউ কেউ হাজার হাজার অজুহাত দেখান। আবার এই প্রতিষ্ঠানেরই অনেক মেধাবী সৎ কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা নির্ধারিত সময়েই মানসম্পন্ন তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। যাঁরা ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা কী হতে পারে, নিজেরাই নিজেদের মূল্যায়ন করুন।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুদকের নিজস্ব ক্যানটিন রয়েছে, তারপরও কেন আমাদের কেউ কেউ অন্য হোটেলে খেতে যান? আমি এর কারণ বুঝি না। ব্যক্তি কখনো অন্য ব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে না’—মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। তিনি বলেন, পদ্ধতিগত কারণেই এ দেশে ঘুষ খাওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ। যাঁদের মান-সম্মানের ভয় নেই তথা কোনো আত্মমর্যাদা নেই, তাঁদের পক্ষে ঘুষ খাওয়া সত্যিই সহজ। এই লজ্জাহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হলে দুদক কর্মকর্তাদের এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে ঘুষখোরদের আইনের আওতায় এনে লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অসাধারণ জ্ঞান, হোমওয়ার্ক এবং কর্মস্পৃহার সমন্বয় না থাকলে কার্যকর অনুসন্ধান বা তদন্ত করা যায় না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা হাজার হাজার কর্মকর্তাকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণের এই শিক্ষাগুলো যাতে নিজ নিজ কর্মে প্রতিফলন ঘটে, সেগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণে যাঁরা ব্যর্থ হবেন, তাঁদের কমিশন আইন অনুযায়ী অন্য সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে যে পরীক্ষা হবে তার ফলাফল ডোসিয়ারে সংরক্ষণ করা হবে। পদোন্নতির বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণের ফলাফল এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’ তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে তাঁর এসব নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকে অনেক ভালো ভালো কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা সুনিপুণভাবে নির্মোহ থেকে মামলার তদন্ত করেন। তাঁদের বাদী–বিবাদী উভয় পক্ষই শ্রদ্ধা করে। কিন্তু যাঁরা ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে মানুষ কী ভাবছে, তা ভেবে দেখতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। কমিশনের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩০ জন কর্মকর্তা এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।