৭০ লাখ টাকার সার জমে পাথর
>* বগুড়ায় বাফার গুদাম
* জমাট সার যন্ত্রের সাহায্যে ভাঙতে হয়
* এ ধরনের সার বিক্রি করতে ডিলারদের বেগ পেতে হয়
বগুড়া শহরে বাফার গুদামের আঙিনায় অন্তত ৫০০ মেট্রিক টন সার ৩টি স্তূপে রাখা হয়েছে। এতে এ সার জমাট বেঁধে গেছে। এ সারের বাজারমূল্য অন্তত ৭০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) সারের বাফার স্টক (আপৎকালীন মজুত) রাখার জন্য গুদামটি নির্মাণ করা হয়। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় এখান থেকে সার সরবরাহ করা হয়। এর ধারণক্ষমতা ১২ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে এখানে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন সার মজুত আছে। গুদামের অন্যান্য স্থানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ থাকলেও অনেক জায়গা ফাঁকা। তবু কয়েক বছর ধরে ইউরিয়া সারের বস্তার তিনটি স্তূপ গুদামের আঙিনায় আছে। ৩টি স্তূপে অন্তত ৫০০ মেট্রিক টন সার আছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাজারমূল্য ৭০ লাখ টাকা।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, গুদামের সামনেই ইউরিয়া সারের বস্তার তিনটি স্তূপ। এগুলো পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে হাত দিয়ে দেখা গেছে, সার জমে গেছে। পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে।
সরকার বিদেশ থেকে সার আমদানি করে। সাধারণত সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে বগুড়ায় সার সরবরাহ করা হয়। এই সার দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহনের জন্য বিসিআইসি কেন্দ্রীয়ভাবে দরপত্রের মাধ্যমে পরিবহন ঠিকাদার আহ্বান করে। পরিবহন ঠিকাদার নিযুক্ত হলে তাঁদের মাধ্যমে সার নিয়ে আসা হয়। বগুড়ার সার নিয়ে আসার জন্য সাউথ ডেলটা ট্রেডার্স, পোটন ট্রেডার্স, নওয়াব ট্রেডার্সসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করা হয়। মূলত তাদের মাধ্যমে সারগুলো গুদামে নেওয়া হয়। ট্রাকে করে সার নিয়ে আসার সময় নানা কারণে বস্তা ফুটো হয়। এতে সার নষ্ট হয়। এই নষ্ট সার গুদামের বাইরে রাখা হয়। নতুন বস্তায় ভরে নষ্ট সার গুদামে ওঠানো হয়। ৫০০ মেট্রিক টন সার পোটন ও ডেলটা ট্রেডার্সের মাধ্যমে এসেছে। তারা নষ্ট বস্তার সার বুঝিয়ে দেয়নি। তাদের টাকাও দেওয়া হয়নি।
পোটন ট্রেডার্সের বগুড়া কার্যালয়ের প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানী বলেন, বাফার গুদামের কাছে তাঁদের পরিবহন ভাড়ার কোনো টাকা পাওনা নেই।
বগুড়া বাফার গুদামের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি বগুড়ায় যোগদানের আগে থেকেই গুদামে ইউরিয়া সারের স্তূপ রয়েছে। এই সারের কোনো হিসাব তাঁকে আগের ইনচার্জ দেননি। এ সম্পর্কে কোনো নথি আছে কি না, সেটাও তিনি জানেন না। তবে তিনি দাবি করেন, সার জমাট বাঁধলেও গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে না।
আনোয়ার হোসেনের আগে বগুড়া বাফার গুদামের ইনচার্জ ছিলেন উপব্যবস্থাপক (প্রশাসক) জসিম উদ্দিন। তিনি অবসরে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন ধরেননি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, জমাটবদ্ধ সার কয়েক বছর আগের। এ কারণে এগুলো ইঞ্জিনের সাহায্যে ভাঙতে হয়। এ সময় ইউরিয়া গুঁড়া হয়ে যায়। ডিলাররা এসব সার নিতে চান না।