বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে জমি দখলের জন্য ৩টি ম্রো পাড়ার ৪৮টি পরিবারের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ এই জমি দখল করতে চায়। এ জন্য তাদের মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ভয় দেখানো হচ্ছে। গত বুধবার বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও গতকাল বৃহস্পতিবার লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ম্রো পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে লামার ইউএনও খিন ওয়ান নু গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করবেন বলে জানান।
সরই ইউনিয়নের ঢেঁকিছড়া নতুনপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) রেংয়েন ম্রো বলেন, ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজার ঢেঁকিছড়া এলাকায় তাঁরা বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন। ৪৮টি পরিবারের মধ্য দুই বছর আগে ১৪টি পরিবার ঢেঁকিছড়া নতুনপাড়ায় চলে যায়। আর ১৬টি পরিবার বেশ কয়েক বছর ঢেঁকিছড়া নোয়াপাড়ায় বাস করছে। যুগ যুগ ধরে জুমচাষ করে আসছে পরিবারগুলো। পাড়ার আশপাশের জুমের জমিগুলো এখন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ দখল করার চেষ্টা করছে। কোম্পানির লোকজন তাদের পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। পাড়া ছেড়ে না গেলে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হবে এবং লোকজন এসে হামলা করবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।
কার্বারিসহ চারজন পাড়াবাসীর স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার লামা উপজেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দপ্তরে তাঁদের কয়েকজনকে ডাকা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের পাড়া ছেড়ে চলে যেতে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। চলে না গেলে পাড়াবাসীকে উচ্ছেদ করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের জমি দখলমুক্ত করা হবে বলে তাঁদের জানানো হয়।
জানতে চাইলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৮৮-৮৯ সালে রাবারবাগানের জন্য ইজারা নেওয়া জমিতে ম্রোরা অবৈধভাবে বসবাস করছে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি। সেখানে কোম্পানির ৬৪ জন শেয়ারহোল্ডারের ১ হাজার ৬০০ একর জমির মধ্যে ম্রোদের দখলে ৬০০ একর জমি রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
কয়েকজন কার্বারি বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কোনো কোম্পানির জমি সরই ইউনিয়নে নেই।
এ বিষয়ে আরিফ হোসেন দাবি করেন, ব্যক্তির নামে জমি ইজারা নিয়ে শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানিকে দিয়েছেন।
ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) যোহন ত্রিপুরা বলেন, ইজরাচুক্তি অনুযায়ী ইজারা নেওয়া জমিতে ১০ বছরের মধ্যে রাবারবাগান সৃজন করা না হলে ইজারাচুক্তি বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। ১৯৮৯ সালে নিয়ে ২৮ বছরেও বাগান না হওয়ায় ওই ইজারা এমনিতেই বাতিল হয়েছে। এ জন্য তিনি গত বছর জেলা প্রশাসকের কাছে ওই ইজারা জমি খাসদখলে নিয়ে আসার আবেদন করছিলেন।
এদিকে ম্রোদের পাড়া ত্যাগ না করতে বলেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। বিষয়টি ইউএনকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।