৩ ভারতীয়কে নিয়ে তাঁর জালিয়াত চক্র

তুরস্কের নাগরিক হাকান ভারতে ১০ লাখ রুপি তোলেন। তাঁর গড়ে তোলা চক্রের সদস্যদের বৃত্তান্ত জানতে কাজ করবে পুলিশ।

ফাইল ছবি

ভারতের তিন নাগরিককে নিয়ে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্র গড়ে তুলেছিলেন তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান। ঢাকায় ধরা পড়ার আগে তুরস্ক ও ভারতে জালিয়াতি করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আন্তর্জাতিক চক্রটি।

ঢাকায় একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড ক্লোন করে টাকা তোলার চেষ্টার ঘটনায় ধরা পড়া হাকান আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জবানবন্দির বরাতে পুলিশ বলছে, তুর্কি নাগরিক হাকান ২ থেকে ৪ জানুয়ারির মধ্যে ইস্টার্ণ ব্যাংকের (ইবিএল) বিভিন্ন বুথে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জার্মানি, তুরস্ক, সৌদি আরব, স্পেন, নরওয়েসহ ৪০টি দেশের নাগরিকদের এটিএম কার্ড ক্লোন করে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে ব্যাংকের অ্যান্টি স্ক্যামিং প্রযুক্তি সক্রিয় থাকায় তিনি টাকা তুলতে পারেননি। বিষয়টি ধরা পড়ে ব্যাংকের অ্যালার্ম সিস্টেমে (সতর্কীকরণ ব্যবস্থায়)। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) জানায়।

জালিয়াতির চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হাকান বলেছেন, তিনি তুরস্কে কার্ড জালিয়াতি করে টাকা তোলার কৌশল রপ্ত করেন। সে দেশে ভারতের নগারিক রোমেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। রোমেল আগে থেকেই কার্ড জালিয়াতিতে চতুর ছিলেন। রোমেল তাঁকে ভারতে কার্ড জালিয়াত চক্রের সদস্য সাকিব হাসানের কাছে পাঠান। সেখানে গিয়ে তিনি সাকিবের সঙ্গে জালিয়াতি করে বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে ১০ লাখ রুপি তুলেছেন। ২০১৯ সালে আসামে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার মামলায় গ্রেপ্তার হন হাকান। আগরতলার একটি হাসপাতালে কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় পালান তিনি। সেখানে জালিয়াত চক্রের আরেক সদস্য সাবের হোসেন তাঁকে কিছু ক্লোন কার্ড দেন। এরপর ভারতীয় এক নাগরিককে দুই লাখ রুপি দিয়ে সিকিম হয়ে নেপালে যান তিনি। সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তুরস্কে ফিরে যান।

তুরস্কে নতুন পাসপোর্ট করে হাকান গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসে রাজধানীর পল্টনের একটি হোটেলে ওঠেন। হাকান আগরতলার কারাগারে থাকাকালে বাংলাদেশি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। রফিকুল ঢাকায় অবস্থানরত তাঁর ভাই মফিকুল ইসলামের ঠিকানা দিয়েছিলেন হাকানকে। ঢাকায় এসে মফিকুলের সহযোগিতা নেন হাকান।

এদিকে পুলিশ জানায়, ইস্টার্ণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জালিয়াতির চেষ্টার বিষয়ে অবহিত হয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে হাকানকে শনাক্ত করে। গত ১৯ জানুয়ারি গুলশান ১ নম্বর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর বাংলাদেশি সহযোগী মফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত চলছে।

সিটিটিসির উপকমিশনার মো. মাহফুজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গত ২৫ জানুয়ারি হাকানকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এখন পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) মাধ্যমে ভারতের এনসিবিকে দিয়ে কার্ড জালিয়াতি চক্রের সদস্য রোমেল, সাকিব ও সাবেরের বৃত্তান্ত জানা গেলে তাঁদের দেশে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।