৩ জেলায় 'বন্দুকযুদ্ধ' ও গোলাগুলিতে নিহত ৪
কক্সবাজারের টেকনাফ, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী ও খুলনার দৌলতপুরে গোলাগুলি ও কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, কক্সবাজারের টেকনাফে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে দুজন নিহত হন। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন সন্দেহভাজন এক মাদক ব্যবসায়ী। খুলনার দৌলতপুর এলাকায় দীর্ঘদিনের পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মারুফ হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার সকালের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দুটি দলের মধ্যে গোলাগুলিতে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাবরাং মেরিন ড্রাইভ জিরো পয়েন্ট এলাকায় দুজন নিহত হন। তাঁরা হলেন নজির আহমেদ (৩৯) ও আবদুল আমিন (৩৫)। নজির সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। আবদুল আমিন হলেন হ্নীলা ইউনিয়নের লেদার নয়াপাড়ার আমির হামজার ছেলে।
পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ১৭৫ পিস ইয়াবা বড়ি, চারটি অস্ত্র (এলজি) ও নয়টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত সদস্য আহত হন।
নিহত নজিরের বিরুদ্ধে মানব পাচারের আটটি, ইয়াবার তিনটি, ডাকাতির সাতটিসহ ১৯টি মামলা রয়েছে। আমিনের বিরুদ্ধে ৪টি মাদকসহ ৬টি মামলা রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের সাবরাং জিরো পয়েন্ট এলাকায় ইয়াবা খালাসকে কেন্দ্র করে দুই দল ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলির খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় পৌঁছালে ত্রিমুখী গোলাগুলির একপর্যায়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পিছু হটে। সেখান থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্থানীয় লোকজন লাশ দুটি শনাক্ত করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই দুজনের মৃত্যু হয়েছিল। আমিনের বুক ও পিঠে তিনটি ও নজিরের বুকে দুটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ইয়াবা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই দল ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে দুজন মারা গেছেন। দুজনই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন। তবে নজির আহমেদের নামে এলাকায় ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আজ বুধবার ভোররাত চারটার দিকে টঙ্গিবাড়ীর পুন্ডের বাজার এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল হোসেন শেখ (৪৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৮টি মাদকের মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলি ও একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে র্যাব। নিহত ব্যক্তির লাশ মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
খুলনা জেলা পুলিশের তালিকায় থাকা ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ শীর্ষ সন্ত্রাসী মিরাজুল ইসলাম মারুফ ওরফে গরু মারুফের (৪৪) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানা এলাকার কার্তিককূল বালুর মাঠ এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। পুলিশের ভাষ্য, এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি পাইপগান, একটি বন্দুকের গুলির খোসা ও ৫৮ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়েছে।
নিহত মারুফ দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের আবদুল গফ্ফার শেখের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটির সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী আবদুল হালিম ও দৌলতপুরের হুজি শহীদ হত্যাসহ ৫টি হত্যা মামলা আছে। এ ছাড়া রয়েছে একটি অপহরণ ও একটি অস্ত্র মামলা। গরু জবাইয়ের মতো মানুষ কোপানোর কারণে তিনি ‘গরু মারুফ’ বলে পরিচিত।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোস্তাক আহমেদ বলেন, রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে গুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। এরপর পুলিশ সেখানে গেলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে যায়। পরে তাঁর সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে লাশ শনাক্ত করা হয়।
ওসি বলেন, কে বা কারা মারুফকে গুলি করে হত্যা করেছে, তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিপক্ষরা তাঁকে হত্যা করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রাতেই লাশ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সোনালি সেন বলেন, মারুফ একজন ভাড়াটে খুনি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দৌলতপুর থেকে খানজাহান আলী থানা এলাকা পর্যন্ত সব জায়গায় চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন। হয়তো ওই চাঁদার টাকা নিয়েই কোনো সমস্যার কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছে।