৩ কোটি টাকার কাজ ভাগ করে নিলেন তাঁরা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ১৬টি সেতু ও কালভার্টের নির্মাণকাজ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদে অবস্থান নিয়ে তাঁদের দরপত্র কিনতে দেননি। এরপর সমঝোতা করে গতকাল রোববার নিয়ম রক্ষায় ১৬টি কাজের প্রতিটিতে ৩টি করে দরপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজের ভাগ-বাঁটোয়ারার বিষয়টি সঠিক নয়। তবে ঠিকাদারেরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে কাজ নিয়েছেন।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই সেতু ও কালভার্টগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার রায়পুর উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তায় সর্বোচ্চ ৩৬ ফুট দীর্ঘ ১৬টি সেতু ও কালভার্টের জন্য বরাদ্দ আসে। এক সপ্তাহ আগে অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়।
সাধারণ ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। এদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদে অবস্থান নিয়ে তাঁদের দরপত্র কিনতে দেননি। গতকাল ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। দরপত্র বহাল রাখার জন্য প্রতিটি কাজের জন্য ন্যূনতম তিনটি দরপত্র প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় তাঁরা সেই নিয়ম রক্ষা করে গতকাল দুপুরে ১৬টি নির্মাণকাজের বিপরীতে ৪৮টি দরপত্র দাখিল করেন।
অন্তত চারজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য গত বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের এক নেতার কার্যালয়ে বৈঠক হয়। তিন-চার ঘণ্টা চলে বৈঠক। পরে রাত ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের একটি কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করে সমঝোতা চূড়ান্ত করা হয়। রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ এবং পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন সমঝোতা প্রক্রিয়া করেন। যাঁরা কাজ নিয়েছেন, তাঁদের ১০ শতাংশ টাকা অগ্রিম হিসেবে গতকাল ‘দলীয় তহবিলে’ জমা দিতে হয়েছে।
তিন যুগ ধরে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন ফরিদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ব্যবসাই ঠিকাদারি। অথচ আমিও দরপত্র কিনতে পারিনি। সাধারণ ঠিকাদারদের কাছে ওই ১৬টি কাজের কোনো দরপত্র বিক্রি করা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। দরপত্র কিনতে পারেননি বা জমা দিতে বাধা পেয়েছেন—এমন অভিযোগ কেউ করেনি।’
আর দলীয় তহবিলের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র ইসমাইল খোকন বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়।