চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির সাজা সংশোধন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
তিন আসামি হলেন, আলমগীর কবির, তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম।
গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে এক আসামির করা আপিল ও দুই আসামির জেল আপিলের ওপর ২৯ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ৬ অক্টোবর রায়ের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ১৯ বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড হয়।
রায়ে আদালত বলেন, ‘আপিলগুলো খারিজ করা হলো। সাজা সংশোধন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। যেখানে যাবজ্জীবন মানে যতদিন জীবিত থাকবেন।’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আলমগীরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ তিন আসামির আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। অর্থাৎ বাকি জীবন তাঁদের কারাগারে থাকতে হবে।’
২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ মুহুরীর বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী দুবৃর্ত্তরা তাঁকে হত্যা করে। তার স্ত্রী উমা মুহুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত থেকে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অপর চারজন বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পান।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু।
আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন হলেন সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, মো. শাহজাহান, মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (পলাতক) ও হাবিব খান (পলাতক)।
মামলায় খালাসপ্রাপ্ত চারজন হলেন অধ্যাপক মো. ইদ্রিছ মিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক মো. জহুরুল হক, অধ্যাপক তফাজ্জল আহম্মদ ও ছাত্রশিবির ক্যাডার নাসির।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ওই বছরই হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। চারজনকে খালাসের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ আপিল করে।
ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০০৬ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। তাঁরা হলেন, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু। এর আগে ২০০৫ সালের মার্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গিট্টু নাছির র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন।
যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি সাইফুল ও শাহজাহান হাইকোর্টে খালাস পান। এর আগে ২০০৪ সালের জুনে নিজের বাসায় সাইফুল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
পলাতক যাবজ্জীবন দণ্ডিত মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন ও হাবিব খানের আপিল বা আবেদনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। চারজনকে খালাসের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ মুহুরীর স্ত্রীর করা আপিল হাইকোর্টে খারিজ হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে বাইট্ট্যা আলমগীর আপিল বিভাগে ২০০৮ সালে আপিল করেন। অপর দুজন তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম ২০০৬ সালে জেল পিটিশন করেন। এসব আপিল খারিজ করে রায় দেওয়া হয়।