নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভোটের দিন গণধর্ষণের শিকার হওয়া সেই নারী (৪০) ১৭ দিনের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ছেড়ে যান তিনি। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নির্যাতিত নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে ওই নারী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল তাঁর সঙ্গে যান। তাঁরা এ সময় নির্যাতনের শিকার নারীর পরিবারকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যায় তাঁদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। চরজব্বর থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহেদ উদ্দিন জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে পরিবারটির শঙ্কায় থাকার কোনো কারণ নেই।
এর আগে গতকাল বুধবার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড নির্যাতনের শিকার নারীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে তাঁকে ছাড়পত্র দেন। তখন তাঁকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে এসে অর্থোপেডিকের মেডিকেল বোর্ডে হাজির থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হলে তাঁর যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ দিনের চিকিৎসায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী এখন বেশ সুস্থ। তিনি নিজেই একা হাঁটাচলা করতে পারছেন। শরীরের যেসব স্থানে ফোলা-জখম ছিল সেগুলোও অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছেন। তাঁর চিকিৎসা তদারকির জন্য গঠন করা পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড দফায় দফায় তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। মেডিকেল বোর্ডই ছাড়পত্র দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখন আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ আছেন। বাড়িতে যেতে পারবেন। তবে স্বামী ও ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর ভেতর ভয় কাজ করছে। তাই তিনি সরকারের কাছে নিরাপত্তা চান।
ওই নারীর স্বামী বলেন, তাঁর স্ত্রীর অবস্থা এখন ভালো। তিনি নিজেই বাড়ি যেতে চান। তবে এলাকার কিছু লোক ‘সরকার-প্রশাসন কয়দিন থাকবে’ বলে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে মারধর ও ধর্ষণ করা হয়। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তাঁকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইদিন তাঁর স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে চরজব্বর থানায় মামলা করেন।