১২০ বাড়ির মালিক এনু-রুপন
১০ বছর আগেও এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার সম্পদ বলতে ছিল ২৯ বানিয়ানগরে লোহালক্কড় বিক্রির একটি দোকান। তাঁরা থাকতেন দোকানের পেছনে একটি টিনশেড বাড়িতে। অভিযানের প্রথম পর্যায়ে র্যাবের কাছে দুই ভাইয়ের মালিকানায় ১৫টি বাড়ির তথ্য ছিল, গ্রেপ্তারের পর সিআইডি জানায়, বাড়ির সংখ্যা ২২। আর রিমান্ড শেষে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ১২০টি বাড়ির তথ্য দিয়েছে।
এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার। ক্লাবপাড়ায় প্রথমে ওয়ান–টেন ও পরে ক্যাসিনো চালুর পেছনে এই দুই ভাইয়ের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। অভিযোগ আছে, টাকা ঢেলে আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়েছিলেন তাঁরা। এনামুল হক ছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আর রুপন ভূঁইয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর গা ঢাকা দেন। পালিয়ে নেপালে যাওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে এনেছিলেন। ধরা পড়ে যান হঠাৎ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় গত ১৩ জানুয়ারি চার দিনের রিমান্ডে আনে এনু–রুপনকে। জিজ্ঞাসাবাদে এনু–রুপন বলেন, ঢাকায় তাঁদের যৌথ মালিকানাধীন শতাধিক ফ্ল্যাট এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাঁচ বিঘা জমি আছে। এই সম্পদ তাঁর মা, সাত ভাই ও এক বোনের নামে। পুলিশ জানাচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদে এনু–রুপন জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের বাবার সঙ্গে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে জুয়ার আসরে গিয়ে বসতেন। সদরঘাটে তাঁদের জুয়ার বোর্ডও ছিল। অঢেল সম্পদের মালিক হন ক্যাসিনোর কারবার থেকে। তবে ট্যাক্স ফাইলে এখনো সম্পদ বলতে সেই পুরোনো এনু–রুপন স্টিল মিলস নামের লোহালক্কড়ের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়কেই দেখিয়ে যাচ্ছিলেন।
যা কিছু সম্পদ তার মালিক এনু, রুপন, রশিদুল, দুলু, আমিনুল, শিপলু, তাঁদের মা মমতাজ বেগম ও বোন চম্পা এবং মৃত এক ভাইয়ের সন্তানেরা। বানিয়ানগরের কারখানার পেছনে ৩১ বানিয়ানগরে এনু–রুপনের ছয়টি ফ্ল্যাট আছে। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে বাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। এই ভবনের দোতলায় এনু ও পঞ্চম তলায় রুপন থাকতেন। এনুর ফ্ল্যাটে থাকা দুটি ভল্ট ও পঞ্চম তলায় রুপনের ফ্ল্যাটে থাকা একটি ভল্ট থেকে অভিযান চালিয়ে র্যাব ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের আট কেজি স্বর্ণালংকার ও পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল। তাঁদের একজন প্রতিবেশী নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় এনু–রুপনদের ফ্ল্যাটের আকৃতির ফ্ল্যাটের দাম ৪০ লাখ টাকার মতো।
>সম্পদ আছে ১২০টি ফ্ল্যাট ও ১৫টি বাড়ি
ক্যাসিনো কারবারে সম্পৃক্ততার দায়ে গ্রেপ্তার দুই ভাই কারাগারে
জুয়ার টাকায় অঢেল সম্পদ
কাছেই লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ভবন ও বাড়ি থাকার কথা জানিয়েছেন এনু–রুপন। এই বাড়িগুলো খুঁজতে যে গলিপথ ধরে এগোতে হয়, তার প্রস্থ বড়জোর ৬ ফুট। এনু–রুপন জিজ্ঞাসাবাদে সাতটি হোল্ডিং নম্বরে তাঁরা ৫টি ফ্ল্যাট, ১০ তলা ভবনের ১০টি ফ্ল্যাট, এক কাঠার প্লট, ছয়তলা তিনটি ভবনের ১২টি ফ্ল্যাট ও একটি এক কাঠা প্লটের কথা জানান। বহুতল ভবন দুটির নামই মমতাজ ভিলা। ১২০ হোল্ডিং নম্বরে এক সারিতে বেশ কয়েকটি ভবন। এমন একটি ভবনের বাসিন্দা সায়েরা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাশের ভাঙা বাড়িটার মালিক এনু–রুপনরা। লালমোহন সাহা স্ট্রিট ছাড়াও এনু–রুপন দক্ষিণ মৈসুন্দিতে সাততলা একটি ভবনে ১৪টি ফ্ল্যাট, গেন্ডারিয়ার শাহ সাহেব লেনে ১০ তলা ভবনের ১৭টি ফ্ল্যাট, ৬ তলা ভবনের ৪টি ফ্ল্যাট ও ৪ তলা একটি ভবনের ১৩টি ফ্ল্যাটের কথা বলেছেন। তা ছাড়া, যৌথ মালিকানায় তাঁদের পরিবারের নারিন্দায় পৃথক দুটি ভবনে ১৬ টি, নারিন্দাতেই ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় দুটি, তৃতীয় তলায় একটি ও নিচতলায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এনু। তাঁদের গুরুদাস সরদার লেনে নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনের ১২টি ফ্ল্যাট ডিস্টিলারি রোডে একতলা টিনশেড বাড়ি রয়েছে। ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জে ১৫ কাঠা জমির ওপর একতলা একটি বাড়িও রয়েছে তাঁদের।
এর বাইরে এনু–রুপন ও তাঁর ভাইদের মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ১০ কাঠার খালি প্লট, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ১২ শতাংশ, পালং থানায় ৩৪ শতাংশ জমি আছে। স্বর্ণ ও বাড়িঘর ছাড়াও এনু–রুপনের জিম্মায় ৭০০ ভরি স্বর্ণ, ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা ও পাঁচটি যানবাহন রয়েছে বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তারা।
সিআইডির বিশেষ সুপার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ভাইয়ের কেউই দশম শ্রেণির গণ্ডি পেরোননি। নেপালের ‘হ্যারি’ (হরি) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ক্যাসিনোর কারবার চালাতেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত নেপালে যোগাযোগ ছিল। ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে নেপালে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন।