সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার নারীদের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর নতুন একটি ইউনিট চালু করেছে। সোমবার রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম ভবন মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিটটির উদ্বোধন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন থেকে হয়রানির শিকার হলে যেকোনো নারী বা শিশু ফেসবুকে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) (http://m.facebook.com/PCSW.PHQ/) পেজে গিয়ে মেসেঞ্জারে অভিযোগ জানাতে পারবেন। তা ছাড়া ই–মেইল ও হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করেও সহযোগিতা নিতে পারবেন। ই–মেইল ঠিকানা [email protected]। হটলাইন নম্বরটি হলো ০১৩২০০০০৮৮৮। এই ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন নারী পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁদের কাজ হবে ঘটনার শিকার নারী ও শিশুদের বিচার পেতে সহযোগিতা করা।
বেনজীর আহমেদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে ১১ কোটি মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের সাত কোটি নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ফেসবুক ব্যবহারেও বাংলাদেশিরা এগিয়ে আছে। সাইবার স্পেসে বাংলাদেশের জনগণের বিশাল পদচারণ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে অনিবার্য কিছু সমস্যাও এসে পড়েছে। পুলিশ নারী–পুরুষ সবার জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে চায়। তবে বাংলাদেশে যত সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তার সিংহভাগের শিকার হচ্ছেন নারী। বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনে ৬ হাজার ৯৯টি মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর বেশির ভাগই করেছেন নারীরা।
কেন স্বতন্ত্র ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সে সম্পর্কে বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করছে। এই কাজে যুক্ত আছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), র্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাইবার অপরাধ দমন ইউনিট। কিন্তু অনেক নারীই এসব জায়গায় অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তিনি যখন অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন, তখন তাঁর কাছে অনেকেই আসতেন প্রতিকার চেয়ে। সে জন্যই নতুন ইউনিট চালু করা হয়েছে। এই ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন নারীরা। নারীরা যেন নারীদের কাছে নির্বিঘ্নে তাঁদের সমস্যার কথা খুলে বলতে পারেন, সে জন্য বাংলাদেশ পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
নারীদের পাশাপাশি শিশু–কিশোরেরাও পুলিশের সহযোগিতা পাবে। শিশুরাও হয়রানির শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সদস্য গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
এই কাজ সফল করতে পুলিশ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছে। আইজিপি বলেন, আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারজয়ী সাদাত রহমান ও তাঁর সংগঠন সাইবার টিনস বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে কাজ করেছে। সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার শিশু–কিশোরদের নিয়ে এই সাইবার টিনস কাজ করে। তারা পুলিশের সহযোগিতায় কমপক্ষে আটটি ঘটনার সমাধান করতে পেরেছে। নারীদের জন্য নেওয়া নতুন এই উদ্যোগেও সাধারণ মানুষ যুক্ত হতে পারেন।
অনুষ্ঠানে এই উদ্যোগ–সম্পর্কিত তিনটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি হ্যাক করা বা হ্যাক করার মাধ্যমে প্রতারণা, ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, কারও ছবি ব্যবহার করে আপত্তিকর কনটেন্ট দিয়ে ফেক আইডি বানানো, ফোন নম্বর বিভিন্ন খারাপ পোস্টে বা সাইটে ছড়িয়ে দেওয়া, সাইবার বুলিং ও হয়রানি, অনলাইনে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করা ও যৌন হয়রানিমূলক মেসেজ মেইল বা লিংক পাঠানোর ঘটনায় নারীরা সহযোগিতা পাবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাইনুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক এন খুরশিদ হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাইবার অপরাধ দমনে সম্পৃক্ত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন পরপর দুই বছর বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের প্রবণতা শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের ৮০ দশমিক ৬১ শতাংশের বয়স ১৮–৩০ বছরের মধ্যে। ২০১৮ সালের তুলনায় সাইবার অপরাধের শিকার নারীদের হার আরও বেড়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৫১ দশমিক ১৩ শতাংশ, সেটি গত বছর ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় আরও বলা হয়, সাইবার হয়রানির শিকার হলেও ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চাননি। তাঁরা গোপন রাখতে চান, কিংবা জানেন না কীভাবে আইনি সহায়তা নেবেন।