হোল্ডিং ট্যাক্সে সমতায়ন চলছে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্সে সমতায়নের কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে পুরোনো হারে নির্ধারণ করা বাড়ির মালিকদের কর বাড়িয়ে নতুনদের সমান করা হবে। তবে অভিযোগ উঠেছে, হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দেখানোর নামে ভবন মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯-৯০ সালে সর্বশেষ সাধারণ কর হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর ২০০৩ ও ২০০৮ সালে দুই দফায় কিছু কর বাড়ানো হয়। এই বর্ধিত কর শুধু ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পরে নিবন্ধিত নতুন হোল্ডিং মালিকদের দিতে হচ্ছে। বর্তমানে এই তিন মাত্রায় হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়ায় বৈষম্য দেখা দিয়েছে। এতে একই এলাকায় পাশাপাশি ভবন মালিকের একজনকে অন্যজনের চেয়ে বেশি বা কম কর দিতে হচ্ছে।
রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (ট্যাক্সেশন) রুলস ১৯৮৬-এর পঞ্চবার্ষিকী সাধারণ মূল্যায়ন নীতি অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পরপর মূল্যায়নের মাধ্যমে কর সমতায়ন করার কথা। ১৯৮৯-৯০ সালের পর তা করা হয়নি। কর সমতায়ন না করায় করদাতাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সমতায়নের মাধ্যমে পুরোনো হারে নির্ধারণ করা বাড়ির মালিকদের কর বাড়িয়ে নতুনদের সমান করার ফলে রাজধানীর অনেক বাড়ির মালিকের কর বাড়বে। সিটি করপোরেশনের আয়ও বাড়াবে।

>পুরোনো হারে নির্ধারণ করা বাড়ির মালিকদের কর বাড়িয়ে নতুনদের সমান করার ফলে রাজধানীর অনেক বাড়ির মালিকের কর বাড়বে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডি ও মতিঝিল এলাকায় ২ অক্টোবর থেকে কর জরিপ শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ইতিমধ্যে উত্তরা এলাকায় কর সমতায়নের লক্ষ্যে জরিপ শেষ করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে গুলশান এলাকায় জরিপ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
জরিপের শুরুতেই সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দেখানোর কথা বলে ভবন মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২-এর অন্তর্ভুক্ত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মালিবাগ, গুলবাগ, শান্তিবাগ এলাকার অন্তত ছয়জন ভবন মালিক অভিযোগ করেছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স কম দেখিয়ে দেওয়া হবে বলে অ্যাসেসর বা কর নির্ধারক তাঁদের কাছে টাকা চেয়েছেন।
মালিবাগ এলাকার এক ভবন মালিক বলেন, ‘গত মাসে এই এলাকার কর নির্ধারক এসে বলেন, এবার অনেক ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। ট্যাক্স কমিয়ে দেখাতে দুই লাখ টাকা চান। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় করতে পারবেন বলে জানান।’ ওই ভবন মালিক অভিযোগ করেন, হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দেখানো বাবদ ইতিমধ্যে তিনি ওই অ্যাসেসরকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
আরেক ভবন মালিক বলেন, ‘কয়েক বছর আগে শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছিল। এবারও শতাংশ হারে বাড়ালেই পারত। কর নির্ধারকদের মাধ্যমে এভাবে কর নির্ধারণ করায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাধারণ লোকজনের ওপর জুলুম করার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট অ্যাসেসর (কর নির্ধারক) প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য তথ্য নিতে গেলে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলেন। আর আমাদের তথ্য নেওয়ার কাজ প্রায় শেষ।’
মালিবাগ এলাকার আদি বাসিন্দাদের সংগঠন পায়রা সমাজকল্যাণ সংস্থার সদস্যরা গত শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাসেসরের কারণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়বে তাতে এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা নেই। কিন্তু কর বাড়ানোর নামে যাতে অযথা হয়রানি করা না হয়।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, জনগণ যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। কেউ টাকা চেয়ে থাকলে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে চাননি। ওই কর নির্ধারণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে এবং দোষী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।