হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১০
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
হারুন অর রশিদ জানান, আনিসুল করিমকে হত্যার অভিযোগে গতকাল সোমবার রাতে তাঁর বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় হাসপাতালটির ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কথিত ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম ও শেফ মো. মাসুদ।
হারুন অর রশিদ বলেন, আদাবর থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। তারা মনে করছে, এটি হত্যাকাণ্ড। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
হারুন অর রশিদ বলেন, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এটা একটা ভুঁইফোড় হাসপাতাল। তারা অবৈধভাবে মানসিক রোগীর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে আসছিল। হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত সবাকে আইনের আওতায় আনা হবে। হাসপাতালটিতে কয়েকজন রোগী আছেন। তাঁরা চলে গেল হাসপাতালটি বন্ধ করে করে দেওয়া হবে।
হারুন অর রশিদ বলেন, হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। আনিসুলকে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট থেকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়ার পেছনে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সিসিটিভির ফুটেজে আনিসুলকে মারধরের চিত্র
মানসিক সমস্যায় ভুগে গতকাল আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আনিসুল। ভর্তির পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির পরপর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তাকে ভর্তির পরই একটি কক্ষে নিয়ে হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারধর করছেন।
আনিসুল ৩১তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি সর্বশেষ বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি।
আনিসুল করিমের ভাই রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁর ভাই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান তাঁরা। যখন ভর্তির ফরম পূরণ করছিলেন, তখন কয়েকজন কর্মচারী তাঁকে দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাঁদের জানানো হয় আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এরপর তাঁরা তাঁকে হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ওই হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেখানে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাঁকে হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরও দুজন কর্মচারী তাঁর পা চেপে ধরেন। এ সময় দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাঁকে আঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদও সেখানে ছিলেন। একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত বাঁধা হয়। চার মিনিট পর আনিসুলের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
একজন কর্মচারী মুখে পানি ছিটান। আনিসুল নড়াচড়া করছিলেন না। তখন কর্মচারীরা কক্ষের মেঝে পরিষ্কার করেন। সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১৩ মিনিটের মাথায় তাঁর বুকে পাম্প করেন ওই নারী।
রেজাউল করিম বলেন, তাঁর ভাইয়ের রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। কিছুটা হৃদ্রোগও ছিল। কিন্তু এ দুটির কোনোটিই প্রকট ছিল না। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিটুনিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল।
পুলিশ জানায়, হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটের খাতায় লেখা রয়েছে ‘ব্রট ডেড’, অর্থাৎ সেখানে নিয়ে আসার আগেই আনিসুলের মৃত্যু হয়েছিল।