স্কুলছাত্রী স্মৃতি গণধর্ষণ-হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় স্কুলছাত্রী স্মৃতি আক্তার (১৫) গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি জাহিদ মিয়াকে (২০) ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাহিদকে কিশোরগঞ্জ শহর থেকে গ্রেপ্তার করে পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ। এই মামলার আরেক আসামি কারাগারে আছেন।
স্মৃতি হোসেনপুর উপজেলার জামাইল গ্রামের আবু হোসেনের মেয়ে। সে হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ১৭ জুলাই রাতে পাকুন্দিয়া উপজেলার গাংধোয়ারচর এলাকায় নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সে গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়।
গ্রেপ্তার জাহিদ পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে। জাহিদ স্কুলছাত্রী স্মৃতি গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের জেলা সরণি মোড় এলাকা থেকে জাহিদকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাহিদের অবস্থান জানতে পেরে বিকেলে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাতে থানা-হেফাজতে রেখে জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ সোমবার তাঁকে কিশোরগঞ্জ আদালতে তোলা হবে। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
এর আগে গত ২১ জুলাই মামলার ২ নম্বর আসামি পিয়াস মিয়াকে (১৮) চট্টগ্রামের পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পিয়াস এখন কারাগারে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, স্মৃতিকে নিয়ে তাঁর মা আঙ্গুরা খাতুন গত ১৬ জুলাই পাকুন্দিয়ার গাংধোয়ারচর গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। আসামিদের বাড়ি স্মৃতির নানাবাড়ির পাশের গ্রামে। নানাবাড়িতে আসা-যাওয়ার সুবাদে স্মৃতির সঙ্গে প্রধান আসামি জাহিদের পরিচয় হয়। নানাবাড়িতে আসার খবর পেয়ে ১৭ জুলাই রাত নয়টার দিকে আসামি জাহিদ পাঁচ-ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে এসে স্মৃতির সঙ্গে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক ছিল না। স্মৃতির মা আসামিদের বুঝিয়ে বলেন, মেয়ে পড়াশোনা করছে। এখনো তার বিয়ের বয়স হয়নি। পড়ালেখা শেষ হলে বিয়ে দেবেন। এ কথা বলায় আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে মা-মেয়েকে হত্যার হুমকি দেন। ওই রাতে মেয়ে ও মা খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন। রাতের কোনো একসময় টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে যায় স্মৃতি। দীর্ঘক্ষণ পরও ফিরে না আসায় মা বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে মেয়েকে খুঁজতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, জাহিদসহ পাঁচ থেকে ছয়জন যুবক মেয়েকে ঘিরে রেখেছেন। একপর্যায়ে স্মৃতিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসামিরা। ভোরবেলায় পুকুরপাড়ে বরইগাছে ঝোলানো অবস্থায় স্মৃতির লাশ দেখতে পান স্বজনেরা। লাশের হাঁটু মাটিতে লেগে ছিল। ডান হাত ও বাঁ পা ভাঙা ছিল। শরীরে নিচের অংশ রক্তাক্ত ছিল।
২০ জুলাই স্মৃতির মা বাদী হয়ে জাহিদ, পিয়াস, রুমান, রাজুসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের পর হত্যা মামলা করেন।
ধর্ষক ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসীসহ নিহত স্মৃতির সহপাঠীরা।