সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার তদন্তের নথি কোথায়

সোহেল চৌধুরী

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুন হওয়ার পর ২৩ বছরের মাথায় সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন জানা গেল, সোহেল চৌধুরীর খুনের মামলার কেস ডকেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার মামলার আলামত কোথায় জমা আছে, সেটি কোনো সংস্থা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারছে না।

কেস ডকেটে মামলার তদন্ত কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তার ডায়েরিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ থাকে।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছে, কেস ডকেট ও আলামত আদালতে উপস্থাপন না করে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

মামলার ৯ আসামির মধ্যে ২ জন জামিনে রয়েছেন। বাকিরা পলাতক। তবে সোহেল খুনের অন্যতম আসামি আশীষ রায় চৌধুরীকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব বলছে, আশীষ দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন।

অবশ্য আদালতের নির্দেশনায় নানা সংস্থার তৎপরতায় জানা গেছে, ১৬ বছর আগে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) দপ্তর থেকে ফরিদ উদ্দিন নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক সোহেল চৌধুরী খুনের মামলার কেস ডকেট নিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান মেলে সেই অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিনের। তবে তিনি আদালতের কাছে আলোচিত এই খুনের মামলার কেস ডকেট বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আরও পড়ুন

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২–এ বিচারাধীন। ওই ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সৈয়দ শামসুল হক ও সাদিয়া আফরিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই খুনের মামলার কেস ডকেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফরিদ উদ্দিন নামের যে পুলিশ পরিদর্শক কেস ডকেট বুঝে নিয়েছিলেন, তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। অবশ্য আদালত ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ফরিদ উদ্দিনকে কেস ডকেট হাজির করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সোহেল চৌধুরী খুনের মামলার তদন্তের কোনো পর্যায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

এদিকে আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোহেল চৌধুরী খুনের মামলার আলামত ঢাকার আদালতের মালখানায় জমা নেই। আদালত এই তথ্য জানার পর গুলশান থানার ওসিকে আলামত আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে গতকাল শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা আদালতে জমা পড়েনি।

যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার ওসি আবুল হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সোহেল চৌধুরী খুনের মামলা তদন্ত করেছিল ডিবি পুলিশ। মামলার আলামত খুঁজে বের করতে আদালতের নির্দেশনার কপি পেয়েছেন। আলামত খুঁজে বের করে খুব শিগগির আদালতকে জানাবেন।

এর আগে এই খুনের মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে উচ্চ আদালত সাত বছর আগে আদেশ দিয়েছিলেন। রহস্যজনক কারণে সেই আদেশের নথি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়নি। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর এই খুনের মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।

আরও পড়ুন

২৩ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে ডিবির তদন্তে উঠে আসে, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে খুন করা হয়। খুন হওয়ার পরের বছর আশীষ রায় চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর (২০০১ সাল) বিচার শুরু হয়। তবে এক আসামি উচ্চ আদালতে গেলে আটকে যায় বিচার কার্যক্রম।

মামলার ৯ আসামির মধ্যে ২ জন জামিনে রয়েছেন। বাকিরা পলাতক। তবে সোহেল খুনের অন্যতম আসামি আশীষ রায় চৌধুরীকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব বলছে, আশীষ দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন।

সোহেল হত্যার কেস ডকেট কোথায়

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত মাসে সোহেল খুনের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পাবলিক প্রসিকিউটরদের মামলার কেস ডকেট ও আলামত হাজির করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে কেস ডকেট চেয়ে মহানগর পিপির দপ্তরে আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট পিপি। এরপর মহানগর পিপির দপ্তরের এক চিঠির বরাত দিয়ে ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি সৈয়দ শামসুল হক গত ১০ মার্চ আদালতকে জানান, সোহেল খুনের মামলার কেস ডকেট ২০০৫ সালের ২ জুন বুঝে নেন ডিবির তৎকালীন পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন। নিবন্ধন খাতায় তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে। ফরিদ উদ্দিন পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে গেছেন ২০১৩ সালে। সর্বশেষ তাঁর কর্মস্থল ছিল সাতক্ষীরা।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি আবদুল্লাহ আবু মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবেন।