স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে কারাগারে তিন সাক্ষী

সিনহা হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত আটজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে মামলার অন্যতম প্রধান আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।

সিনহা মো. রাশেদ খান
সংগৃহীত

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আরও তিন আসামি বুধবার কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই তিনজন হলেন টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস। সিনহা হত্যার ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলায় এই তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। তবে সিনহার বোনের করা মামলায় তাদের আসামি করা হয়।  

এর আগে সিনহা হত্যা মামলার আরও পাঁচজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন সিনহা হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি বাহারছড়ার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, শামলাপুর তল্লাশিচৌকির দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। তাঁরা বর্তমানে জেলা কারাগারে আছেন। সব মিলিয়ে আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।

আরও পড়ুন

বুধবার সকাল ১০টার দিকে র‌্যাবের গাড়িতে করে তিন আসামি নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াসকে আদালতে নেওয়া হয়। এরপর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য তাঁদের নেওয়া হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে। বিকেল তিনটার দিকে তিনজনকে প্রিজনভ্যানে তুলে পাঠানো হয় জেলা কারাগারে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন আসামি নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াসকে। এক দিনের রিমান্ড শেষে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। তাই তাঁদের আদালতে নেওয়া হয়। এর আগে আরও দুই দফায় তাঁদের ১১ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিনহা হত্যার ঘটনায় এই তিন আসামি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করা হয়। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে তাদের আরেক সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথকে আটক করা হয়। সিফাত ও শিপ্রা দুজনই এখন জামিনে আছেন।

এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলায় সাক্ষী ছিলেন মারিশবুনিয়া গ্রামের তিনজন। পরে সিনহার বোনের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর আগে প্রথম দফায় সাত দিন ও দ্বিতীয় দফায় চার দিন করে তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত সংস্থা।

চার দফায় ১৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। কিন্তু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

র‌্যাব সূত্র জানায়, সিনহা হত্যা মামলার মোট আসামি ১৩ জন। বর্তমানে তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের কাছে চার দিনের রিমান্ডে আছেন চারজন। তাঁরা হলেন টেকনাফ থানার এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন।