সিআরবিতে জোড়া খুনে ব্যবহৃত পিস্তলের হদিস মেলেনি
>ছয় বছর পর পলাতক আসামি অজিত গ্রেপ্তার
দোতলা বাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা ব্যর্থ
চট্টগ্রামের আলোচিত জোড়া খুনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াতেন তিনি। কিন্তু গ্রেপ্তার হননি। তাঁর নাম অজিত বিশ্বাস। তিনি যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। ছয় বছর আগের মামলায় পুলিশ তাঁকে ধরতে অভিযানে গেলে বাড়ির দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত গত মঙ্গলবার রাতে জেলার বোয়ালখালীর ধোরলা থেকে অজিতকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে অজিতের পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে সেদিন দুজন নিহত হন। পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও পিস্তলটি উদ্ধার করা যায়নি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধারের জন্য গ্রেপ্তারের পর অজিতকে নিয়ে তাঁর বাড়িসহ আশপাশে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু হদিস পাওয়া যায়নি। অস্ত্রটি উদ্ধার করা গেলে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা সহজ হতো। এটি উদ্ধারের জন্য পুলিশের চেষ্টা রয়েছে।
রেলওয়ের কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জুন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবর এবং ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম ওরফে লিমনের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর) এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগের কর্মী সাজু পালিত (২৮) এবং শিশু মো. আরমান (৮)।
বাবর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং লিমন চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ও পরে নিহত সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত মামলা করেন। সবশেষ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিবিআই ৬৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এতে প্রধান আসামি করা হয় অজিত বিশ্বাসকে। দ্বিতীয় আসামি রয়েছেন সাইফুল আলম লিমন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেদিন দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আগে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে অজিত বিশ্বাস পূর্বশত্রুতার কারণে সাজু পালিতকে গুলি করেন। এ সময় লিমনের অনুসারীরা বাবরের অনুসারীদের দিকে এগিয়ে এলে অজিত আবার গুলি ছোড়েন। সেই গুলিতে শিশু আরমান নিহত হয়। পরে আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে। বর্তমানে বিচার শুরুর জন্য রয়েছে মামলাটি।
পুলিশ সূত্র জানায়, জোড়া খুনের মামলাটি বিচারের জন্য থাকায় এই মামলায় অজিতকে রিমান্ডে নিয়ে অস্ত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়। তাঁকে অন্য মামলায় রিমান্ডে নিয়ে অস্ত্রটির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
আদালত সূত্র জানায়, তদন্তে গুলি করার অভিযোগ ওঠা যুবলীগের কর্মী অজিত এই মামলায় কখনো কারাগারে যাননি। ঘটনার পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।
পরে মামলার ধার্য দিনে নিয়মিত হাজিরা না দেওয়ায় নিম্ন আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানা নিয়েই অজিত সামাজিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। এমনকি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাঁর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এত কিছুর পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার জাহেদুল আলম বলেন, অজিত দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ আগ থেকে চারপাশে ঘেরাও করে করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
গতকাল বিকেলে অজিতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে আদালত প্রাঙ্গণে ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
সাজু পালিতের বড় ভাই উৎপল পালিত বলেন, সেদিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সময় অজিত বিশ্বাসই তাঁর ভাইকে গুলি করেছে। প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। এত দিন পরেও হলেও পুলিশ তাঁকে ধরেছে এটাই সান্ত্বনা। এবার অস্ত্রটি উদ্ধার হোক।