মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে কুয়েতে কারাবন্দী বাংলাদেশের সাংসদ সহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল, তাঁর স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সহিদের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম। তাঁদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন আজ বুধবার সকালে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সহিদ, সেলিনা, জেসমিন ও ওয়াফার ৫টি হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা পাচার হয়। জেসমিন ও ওয়াফার বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। জেসমিন এফডিআর হিসাবে ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকা দেখিয়েছেন। তাঁর কোনো বৈধ উৎস তিনি দাখিল করতে পারেননি। সহিদ ও সেলিনার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সহিদ লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ। সেলিনা সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ। শুধু টাকার জোরেই তাঁরা গত নির্বাচনে সাংসদ হন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।
২০১৮ সালে সহিদের নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়, ওই সময়েই তিনি ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা সোনাদানাসহ প্রায় শতকোটি টাকার অর্থসম্পদের মালিক। এর মধ্যে কেবল ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত থেকেই সহিদের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ১৭৪ টাকা। স্ত্রী সেলিনা ব্যাংকের আমানত থেকে বছরে সুদ পান ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৬ টাকা।
হলফনামায় সহিদ উল্লেখ করেন, তাঁর নামে ৩৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা আছে। স্ত্রীর নামে ৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার অর্থসম্পদ। এর বাইরে মেয়ে ওয়াফার একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, যার মূল্য ১ কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
মামলা করার আগে দুদক সেলিনা, ওয়াফা ও জেসমিনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর সেলিনা ও তাঁর বোন জেসমিনকে দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সে সময় দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সেলিনা ও জেসমিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানাধীন অভিযোগ হচ্ছে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক সহিদ ইসলামসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহককে ঋণ বরাদ্দ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করা। আরও রয়েছে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।