সর্বরোগ নিরাময় করতেন রায়হান
রায়হান মণ্ডলের বয়স ৩২। এসএসসি পাস। তিনিই এখন সর্বরোগ নিরাময়ের কবিরাজ। ঝাড়ফুঁক দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাপত্র দিয়ে থাকেন তিনি। শুধু চিকিৎসাপত্র নয়, পাশাপাশি রোগীদের কাছে তিনি নিজের দোকানের অ্যালোপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধও বিক্রি করেন।
কবিরাজ রায়হান সব ধরনের রোগ সারাতে পারেন, এই বিশ্বাসে তাঁর কাছে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ জড়ো হচ্ছিলেন ও চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পার পেলেন না। সম্প্রতি তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকার সচেতন কিছু মানুষ প্রশ্ন তোলেন। অভিযোগ করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কাছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৫-এর একটি দল আজ বুধবার রায়হানের আস্তানা নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ভাতকুণ্ডু গ্রামে অভিযান চালায়।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাইমেনুর রশিদের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে কবিরাজ রায়হানকে আটক করে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গণপতি রায় ও ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন সরদার।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইউএনও গণপতি রায় তৎক্ষণাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কবিরাজ রায়হানকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে রায়হানের ওষুধের দোকানে থাকা প্রায় ১০ লাখ টাকার বিক্রিনিষিদ্ধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়।
গণপতি রায় বলেন, রায়হানের কাছে চিকিৎসকের কোনো সনদ নেই। তবুও তিনি বিভিন্ন কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ওষুধের চিকিৎসাপত্র লিখতেন। এ ছাড়া তিনি জিন-ভূত তাড়ানোর কথা বলে ঝাড়ফুঁকের নামে মারধর করতেন। তাঁর প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন এসব সাক্ষ্য দিয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছেও রায়হান এসব অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
ইউএনও বলেন, রায়হান শুধু ঝাড়ফুঁক ও চিকিৎসাপত্রই দিতেন না, এর পাশাপাশি তিনি অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধও বিক্রি করতেন। চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী রোগীরা তাঁর দোকান থেকেই এসব ওষুধ কিনতেন। রায়হানের দোকানে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিক্রিনিষিদ্ধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সামনে এসব ওষুধ ধ্বংস করা হয়।
ধামইরহাট থানার ওসি শামীম হোসেন সরদার বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কবিরাজ রায়হানকে গতকালই নওগাঁ করাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দণ্ডপ্রাপ্ত রায়হান উপজেলার ভাতকুণ্ডু গ্রামের সাদেক আলী মণ্ডলের ছেলে। নিজ বাড়িতে চিকিৎসালয় খুলে প্রায় সাত-আট বছর ধরে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। এলাকায় তিনি সর্বরোগ নিরাময়ের কবিরাজ হিসেবে পরিচিত। তাঁর চিকিৎসায় সব ধরনের রোগ ভালো হয়, এ বিশ্বাসে এলাকার অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষ তাঁর চিকিৎসালয়ে ভিড় জমাতেন।