রাজধানীর বাড্ডায় গভীর রাতে ৩ নারীর হাত-মুখ বেঁধে ডাকাতি, পাঁচ আসামি গ্রেপ্তার
সৈয়দ নুরুল হক যখন ‘এই যে ডাকাত, এই যে ডাকাত’ বলে চিৎকার দিলেন, ডাকাত দলের তিন সদস্য তখন জানালার গ্রিল দিয়ে লাফিয়ে পাশের ভবনে চলে যায়। ৫৫ বছর বয়সী নুরুল এরপর সাততলার একটি কক্ষে গিয়ে দেখতে পান, তাঁর মেয়ের চোখ-মুখ বাঁধা। পাশে পড়ে আছেন মেয়ের এক বান্ধবী ও বাড়ির গৃহকর্মী। এই দুজনেরও হাত-পা-মুখ বাঁধা। সবার বাঁধন খুলে দেওয়ার পর নুরুল হক দেখতে পান, ষষ্ঠ আর সপ্তম তলার আলমারিসহ কক্ষের বিভিন্ন জিনিসপত্র এলোমেলো।
রাজধানীর বাড্ডায় ঠিকাদার নুরুল হকের বাড়িতে এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩ সেপ্টেম্বর। নুরুল হকের মেয়ের দাবি, মুঠোফোন, গয়নাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। এ ঘটনায় ডাকাত দলের অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নুরুল হক।
নুরুল হক এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ষষ্ঠ তলার একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন ১৮ বছর বয়সী গৃহকর্মী নাজমা বেগম। রাত চারটার দিকে হঠাৎ তিনজন লোক তাঁর কক্ষে ঢুকে পড়ে। তাদের হাতে ছিল ধারালো চাপাতি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাজমার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় ডাকাত দলের তিন সদস্য। জানালার পর্দা খুলে গৃহকর্মীর হাত বেঁধে ফেলে তারা। এরপর নাজমাকে নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তম তলায়। সেখানে ছিলেন নুরুল হকের মেয়ে ও তাঁর এক বান্ধবী। ওই দুই তরুণীর চোখ-মুখও বেঁধে ফেলে ডাকাতেরা। এ সময় একটি ড্রয়ারে থাকা এক জোড়া হিরের কানের দুল, একটি হিরের হার ও বিছানার ওপর থাকা দুটো আইফোন ব্যাগে ভরে ফেলে ডাকাতেরা। একপর্যায়ে পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পেয়ে রাত ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে সপ্তম তলার জানালার গ্রিল দিয়ে পাশের নির্মাণাধীন ভবনে লাফিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা।
সৈয়দ নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন ঠিকাদার। ষষ্ঠ তলার একটি কক্ষে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। পাশের আরেকটি কক্ষে ছিল গৃহকর্মী নাজমা। সপ্তম তলার অন্য একটি কক্ষে ছিল আমার বড় মেয়ে ও তাঁর বান্ধবী। সপ্তম তলা থেকে পুরুষ কণ্ঠের আওয়াজ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওপরে যাই। চিৎকার দেওয়ার পর ডাকাতরা দ্রুত জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার আগে তাঁরা চাপাতি, ছুরি আর একটি মানিব্যাগ ফেলে যায়।’
মানিব্যাগের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার চার আসামি:
সৈয়দ নুরুল হক থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্তে নামে বাড্ডা থানা-পুলিশ। তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুলহাস মিয়াকে।
জানতে চাইলে জুলহাস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকাত দলের সদস্যরা একটি মানিব্যাগ ফেলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি আমরা জব্দ করি। মানিব্যাগের ভেতর কয়েকটি কাগজের টুকরো পাই। সেখানে কিছু মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। সেই নম্বরগুলোর সূত্র ধরে ঘটনার দুই দিন পর আমরা প্রথমে ইকবাল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করি। ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ইকবাল।’
বাড্ডা থানা-পুলিশ ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে বলে, নুরুল হকের বাড়িতে সেদিন ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে মোশাররফ হোসেন, কবির হোসেন, ইকবাল, রাজিবুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান নামের পাঁচ ব্যক্তি। আসামিদের গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তার করে ঢাকার আদালতে তোলে বাড্ডা থানার পুলিশ। প্রত্যেক আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে আছে।
পুলিশ কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া বলেন, ডাকাতির ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকারী হলো মোশাররফ হোসেন। আগেও মোশাররফ একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। তার নামে অস্ত্র, ডাকাতিসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। মোশাররফের কাছ থেকে ডাকাতির দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
ডাকাতির পরিকল্পনার বিষয়ে এসআই জুলহাস বলেন, নুরুল হকের ভবনের পাশেই নির্মাণাধীন একটি ভবন আছে। এই ভবনের সাততলায় ডাকাত দলের সদস্যরা মাদক সেবন করত। নির্মাণাধীন ভবন থেকে কাঠের তক্তা দিয়ে নুরুল হকের বাসায় আসে ডাকাত দলের সদস্যরা। ডাকাতির পর ওই কাঠ বেয়েই আবার নির্মাণাধীন ভবনে চলে যায়।
সৈয়দ নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের পর বাড্ডায় এমন আরও দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই থানায় অভিযোগ করেননি। এই ডাকাতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’