রাউজানে খালে বাঁধ দিয়ে মাটি বিক্রি
চট্টগ্রামের রাউজানের সর্তা খালে বাঁধ দিয়ে গত ১৫ দিন মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কাজে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে খালের দুপাশের কৃষিখেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। পাশাপাশি খালের পাড় ভেঙে বাড়িঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সর্তা খাল হালদা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে রাউজানের গহিরা, নোয়াজিষপুর, চিকদাইর, হলদিয়া ও ডাবুয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে খাগড়াছড়ির দিকে চলে গেছে। এটির প্রস্থ কোথাও ১০০, কোথাও ১২০ ফুট। উপজেলা প্রশাসনের দাবি, খাল কাটার ব্যাপারে কেউ অনুমতি চায়নি। অনুমতি ছাড়া খাল থেকে মাটি কাটা, বাঁধ দেওয়া, বালু তোলা বেআইনি।
সর্তা খালা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের নতুনহাট বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের আকবর শাহ সেতু এলাকায় মাটি কাটা হচ্ছে।
খালপাড়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গত ১৫ দিন এখানে বাঁধ দিয়ে মাটি কাটছেন গহিরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সায়েদুল আলম। এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ ট্রাক মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
গত সোমবার বিকেলে নতুনহাট বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালের অন্তত ১২০ ফুট অংশে আঁড়াআঁড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ওই বাঁধের ওপর দিয়ে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে খালের মাটি কাটা হচ্ছে। কেটে নেওয়া মাটি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
খাল থেকে মাটি কাটার ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে পাশের আকবর শাহ সড়ক। রুদ্ধ হয়ে গেছে খালের পানিপ্রবাহও।
খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ট্রাক মাটি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এসব মাটি আশপাশে বাড়িঘর করার জন্য কিনে নিচ্ছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ শামসুল আলম বলেন, গত ১৫ দিন খালে বাঁধ দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। দিনে–রাতে ট্রাকে এ মাটি পাচার করা হচ্ছে। তবে কারা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি।
স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ার ফলে জমিতে সেচ দেওয়ার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এতে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
মাটি পরিবহন করা ট্রাকচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, আশপাশের এলাকায় বাড়ি করছেন, এমন লোকজন জমি ভরাটের জন্য মাটি কিনে নিচ্ছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গহিরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াজিষপুর ও চিকদাইর ইউপি চেয়ারম্যানের কথা তিনি মাটি কাটছেন। তাঁরা যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন ওভাবে কাটা হচ্ছে মাটি। তিনি কোনো অন্যায় কাজ করছেন না বলেও দাবি করেন। তবে মাটি কাটার আগে প্রশাসনের অনুমতি নেননি বলে স্বীকার করেন তিনি।
নোয়াজিষপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার্দী সিকদার ও চিকদাইর ইউপি চেয়ারম্যান প্রিয়তোষ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খালের এক পাশ ভেঙে যাওয়ায় অপর পাশের মাটি কেটে বসতি রক্ষা করা হচ্ছে। মাটি কেটে খালের গতিপথ পরিবর্তন করতেই তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া খালের মাটি কাটা বা বাঁধ দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। এখানে মাটি কাটা বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। খোঁজখবর নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’