যেভাবে ধরা পড়লেন মজনু
মজনু। বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। হালকা-পাতলা গড়ন। ক্ষীণকায় এই লোকই হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর হিংস্রতার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। কুর্মিটোলায় ব্যস্ত সড়কের পাশে ঝোপে তাঁকে ধর্ষণ করেন মজনু। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন মেয়েটিকে। ধর্ষণের ঘটনায় মজনুকে আজ বুধবার ভোরে শেওড়া রেলক্রসিং এলাকা থেকে আটক করে র্যাব।
কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে এই দুদিন কোথায় ছিলেন মজনু? র্যাব জানায়, ঘটনার পর মজনু ঘটনাস্থল থেকে চলে যান রাস্তার ওপারে শেওড়ার রেলস্টেশন এলাকায়। সেখানে অরুণা নামের এক নারীর কাছে মজনু কেড়ে নেওয়া মোবাইল ফোন সেটটি ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন। এরপর মজনু ওই রাতে পাড়ি দেন নরসিংদী জেলায়। নরসিংদী রেলস্টেশন এলাকায় ঘটনার পরদিন সোমবার পুরো দিন কাটিয়ে দেন তিনি। সেখান থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবার চলে আসেন শেওড়া রেলক্রসিং এলাকায়। এরপরই ধরা পড়েন মজনু।
মজনুকে ধরার পর আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান র্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, মজনু যাঁর কাছে তাঁর মোবাইল ফোনটি বিক্রি করেন, সেই অরুণাকে আটক করা হয়। আটকের পর অরুণা জানান, তিনি কেনার সময় মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান। মেরামতের জন্য অরুণা সেটটি খায়রুল নামের একজনের কাছে দিয়েছিলেন। পরে খায়রুলকে আটক করা হয়। অরুণা ও খায়রুলের কাছেই মজনুর শারীরিক গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে মজনুকে আটক করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, মজনুর মুখের সামনে দুটি দাঁত ভাঙা ছিল। ১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে দাঁত দুটি ভেঙে যায়। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দেওয়া বিবরণের সঙ্গে অরুণা ও খায়রুলের দেওয়া মজনুর চেহারার বিবরণ মিলে যায়। এরই সূত্র ধরে মজনু আটকের জন্য র্যাব অভিযান শুরু করে।
র্যাবের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মজনুর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা গ্রামে। বেশ কিছু দিন আগে তাঁর স্ত্রী মারা যান। মজনু ঢাকায় বিমানবন্দর, শেওড়া এলাকায় কখনো দিনমজুর, কখনো হকারের কাজ করতেন। তবে এসব পেশার আড়ালে তিনি ছিনতাই, চুরি করতেন। আবার মাদকাসক্তও ছিলেন। এর চেয়েও ভয়ংকর ঘটনাও ঘটাতেন মজনু। সেটি হচ্ছে ধর্ষণ। ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী নারীদের তিনি টার্গেট করতেন। এ ধরনের নারীদের কৌশলে নিয়ে শেওড়া এলাকায় রাখতেন তিনি। এরপর এই নারীদের ধর্ষণ করতেন মজনু। তিনি একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ বা ক্রমিক ধর্ষণকারী।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, মজনু এভাবে পাঁচ-ছয়জনকে ধর্ষণ করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু তাঁর এসব অপকর্ম ও হিংস্রতার কথা স্বীকার করেছেন। ধরা পড়ার পরও মজনু নির্বিকার রয়েছেন। র্যাবের পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘মজনু বিকৃত মানসিকতার লোক। তাঁকে শনাক্ত করেছেন ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেয়েটির সঙ্গে আমি কয়েকবার কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আমি দুনিয়া সমস্ত মানুষের চেহারা ভুলব। কিন্তু এর চেহারা ভুলব না। ’