সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান (২৮) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত হয়ে ভারত পালাতে চেয়েছিলেন। এ জন্য রোববার ভোর ছয়টার দিকে তিনি ছাতক নোয়ারাই এলাকায় সুরমা নদীর খেয়াঘাটে যান। খবর পেয়ে সেখানে যান ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিল্লাল হোসেন।
এএসপি বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছবিতে সাইফুরের দাঁড়ি ছিল। তিনি দাঁড়ি কেটে মুখে মাস্ক লাগিয়ে খেয়াঘাটে যান। পরনে ছিল টি-শার্ট ও প্যান্ট। ভোরে সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান। হয়তো সীমান্ত এলাকায় গিয়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা ছিল।’ তিনি আরও বলেন, সাইফুরকে পালাতে কেউ সহায়তা করেছেন কিনা, তার খোঁজ করতে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে তাঁর আত্মীয়দের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোর ছয়টার দিকে সাইফুরকে আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সাইফুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ছাতক থানা থেকে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে। স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি তিনি। মামলার এজাহারে তাঁর বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে 'ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো'। ছাত্রাবাসে তিনি ২০৫ নম্বর কক্ষটি দখল করে থাকতেন। গত শুক্রবার রাতে ধর্ষণ ঘটনার পর ভোর রাতে ছাত্রাবাসে পুলিশের অভিযানে ২০৫ নম্বর কক্ষ থেকে পাইপগান, চারটি রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে সাইফুরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ মামলা ছাড়াও সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা আছে। দুই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ছাতক থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ছাতক উপজেলার সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকায় নজরদারি করছিল। সাইফুরকে ভোর ছয়টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা খেয়াঘাট পার হয়ে অপেক্ষা করতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। কাছে যেতেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সাইফুরের ছবির সঙ্গে তাঁর মিল পাওয়া যায়। তখন তাঁকে নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এতে তিনি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। থানায় তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
সাইফুরকে আটক করার সময় সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকায় থাকা দুজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এই খেয়া পার হয়ে সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলায় যাওয়ার দুটো পথ আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বুগলা সড়কপথ। এই সড়কপথ বুগলা গেলে নিরাপদে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করার সুযোগ ছিল সাইফুরের।