‘মিনি গেস্টরুমে’ নির্যাতন, ভয়ে হল ছাড়লেন ঢাবির শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ‘মিনি গেস্টরুমে’ ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু তালিব পরে ভয়ে হল ছেড়েছেন।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে একই রাতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে ছাত্রলীগ বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হলের অতিথিকক্ষে ডেকে নির্যাতন করার ঘটনা শিক্ষার্থীদের কাছে ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে হলের কোনো কক্ষে ডেকে নির্যাতন করা হলে তাকে শিক্ষার্থীরা ‘মিনি গেস্টরুম’ নির্যাতন বলেন।
সাধারণত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায়। এবার দ্বিতীয় বর্ষের কোনো শিক্ষার্থীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠল।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী আবু তালিবের সঙ্গে আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ সময় ঘটনার বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এই মুহূর্তে ভয়ে হলের বাইরে আছেন বলে জানান তিনি।
নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তালিবের সহপাঠীসহ তৃতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন এলাকায় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ শান্ত আলমের সামনে আবু তালিব ধূমপান করেছেন, এমন অভিযোগে গতকাল রাতে তাঁকে (তালিব) হলের ২০১ (ক) নম্বর কক্ষে তলব করা হয়। সেখানে তালিবের অন্য সহপাঠীদেরও ডাকা হয়। ওই কক্ষে যাওয়ার পর তালিবের মুখে জোর করে সিগারেট ধরিয়ে দেন শেখ শান্ত আলম ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমদাদুল হক ওরফে বাঁধন। তালিবকে হাত দিয়ে না ধরে ও ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেটটি শেষ করতে বলেন তাঁরা।
ওই শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় আবু তালিবকে স্টাম্প দিয়ে পেটান শান্ত আলম ও ইমদাদুল। এ সময় তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম ওরফে বিজয় এবং আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ওরফে ফাগুন তালিবকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অনিয়মিত হওয়ার অভিযোগ তুলে এদিন রাতেই অন্তত ১০ জন ছাত্রকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষার্থীরা হলের ৩০১ (ক) নম্বর কক্ষে থাকতেন। কক্ষটিতে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শান্ত আলম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভুয়া। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
ইমদাদুলও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যে চারজনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মেহেদীর মুঠোফোনে একাধিক কল করেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. আকরাম হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। দায়িত্বরত শিক্ষকদের খোঁজ নিতেও বলেছেন। অভিযোগের তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।