মামলার পর এবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুর
>• গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে
• র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেনকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়
• জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাছ, ফল চুরি ও জমি দখলের অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল।
ঢাকার আশুলিয়ার মির্জানগরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন, ছাত্রী হোস্টেল ও গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসেও হামলা চালানো হয়। এ সময় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেনকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার সকালে হামলার ঘটনার পর সম্মেলন কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকায় কটন টেক্সটাইল ক্র্যাফট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে হামলা করে সন্ত্রাসীরা সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশপথের মূল ফটক ভেঙে ফেলেছিল।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাছ, ফল চুরি ও জমি দখলের অভিযোগে গত বুধবার আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়েছিল।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি নাজিম উদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দ্য কটন টেক্সটাইল ক্র্যাফটের মালিক কাজী মহিবুর রবের করা মামলার এক দিন পর ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মেলন কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। নালিশি সম্পত্তি নিয়ে একাধিক আদালতে মামলা চলমান। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর আদালতের নির্দেশ ছাড়া কেউ এই জমি দখল করতে পারে না। কিন্তু মহিবুর রবসহ অন্যরা থানায় মিথ্যা মামলা দিয়েই জনস্বাস্থ্যের দখলে থাকা জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল আটটার দিকে দুই শতাধিক লোক একযোগে পিএইচএর ছয়তলা ভবনে হামলা চালায়। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র, লোহার রড ও লাঠি ছিল। হামলা চালিয়ে তারা ওই ভবনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বের করে দিয়ে নিচতলার সম্মেলন কক্ষসহ ছয়তলা পর্যন্ত বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর চালায়। তারা সম্মেলন কেন্দ্রের মাল্টিমিডিয়া ও সাউন্ড সিস্টেম, ফ্রিজ, সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটার, ওষুধ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, রাউটার, এসি, ফ্যানসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী ভাঙচুর ও লুটপাট করে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চালানো ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন ও তিনটি ছাত্রী হোস্টেলে হামলা চালায়। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে হোস্টেলের ছাত্রী ও বাসভবন থেকে লোকজন বের করে দেয়। এ সময়ই লিমন হোসেনকে তারা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ডান হাত ভেঙে দেয়।
দ্বিতীয় দফা হামলা করা হয় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। এ সময় পাশের গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসে হামলা চালিয়ে ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা ধাওয়া দিলে তারা চলে যায়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নারী হোস্টেলের সহকারী হোস্টেল সুপার কোহিনুর আক্তার বলেন, শিক্ষানবিশ স্বাস্থ্য সহকারী ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে ছয়টি হোস্টেল রয়েছে। এর মধ্যে ডক্টর, লালটেক ও স্কুলটেক হোস্টেলে গতকাল হামলা চালানো হয়। তারা দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হয়।
সম্মেলন কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, হামলার পর শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সম্মেলন কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় কাউকে ওই এলাকায় যেতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে জানিয়েও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। দুপুরের পর সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েক শ কর্মচারী ও শিক্ষার্থী জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তাঁদের অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সম্মেলন কেন্দ্রসহ হোস্টেল ও বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঐক্যফ্রন্টে আছি এটাই হামলার একমাত্র কারণ। আমাকে তারা অন্য কোনোভাবে শাস্তি দিতে পারে না, জব্দ করতে পারে না, তাই এই হামলা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনই এই হামলার পেছনে ছিল। পেছনে আরও অনেকে ছিল। হামলার সময় কাছেই পুলিশ ছিল। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা নিয়ে নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে।
আগামী ১৫ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন কেন্দ্রে জনস্বাস্থ্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে ১০৭টি দেশের ৬০০ প্রতিনিধি যোগ দেওয়ার কথা। হামলার কারণে সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, সম্মেলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বটে, কিন্তু সম্মেলন হবে। আর গ্রামবাসী ঘটনা বুঝতে পেরেছে। তারা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসছে।