মর্গে মরদেহ থেকে স্বর্ণালংকার চুরি
আনন্দে ভরপুর পরিবারটিতে বিষাদের ছায়া নেমে আসে এক সড়ক দুর্ঘটনায়। দুই সন্তানসহ মারা যান স্কুলশিক্ষক ইফরাত সুলতানা (৪০)। লাশ তিনটি মর্গ থেকে আসে ঠিকই। কিন্তু নিহত শিক্ষকের গায়ে থাকা স্বর্ণালংকার খোয়া যায়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন ডোমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় খোয়া যাওয়া অলংকার।
গত রোববার দুপুরে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান সিরাজগঞ্জ সদরের বনবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইফরাত সুলতানা, ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মাশবুবুর রহমান (১২) ও মেয়ে নার্সারির ছাত্রী সোয়াইবা রহমান (৬)।
ঘটনাস্থল থেকে সিরাজগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ লাশ তিনটি উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে রোববারই ময়নাতদন্ত না করার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু নিহত ইফরাত সুলতানার গায়ে সোনার একটি চেইন, দুটি আংটি, দুটি হাতের বালা, এক জোড়া কানের দুল ও নাকফুল ছিল। মর্গ থেকে লাশ পাওয়ার পর ইফরাতের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়নি বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। এ ব্যাপারে সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ করেন তাঁরা।
পুলিশ সোমবার বিকেলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ডোম রানা, শাহ আলম ও সুমনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা স্বর্ণালংকার চুরির কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে বাসা থেকে স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, নিহত শিক্ষকের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন ডোমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার তিন ডোমকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, অবশ্যই ডোমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গত রোববার স্কুলশিক্ষক ইফরাত সুলতানা তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে শহরে যাচ্ছিলেন। রিকশাটি কালাচান মোড় এলাকায় পৌঁছালে বেলকুচি থেকে সিরাজগঞ্জগামী জাহাঙ্গীর পরিবহনের একটি বাস সামনের একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে অটোরিকশাটি চাপা দেয়। এতে রিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই ইফরাত ও তাঁর দুই সন্তান নিহত হন।