বাবাকে শিক্ষা দিতে গিয়ে খুন
মা ও ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে বাবা দুর্ব্যবহার করতেন। এ জন্য বন্ধুদের নিয়ে বাবা আবুল কালামকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন ছেলে আবুল হাসান (১৯)। কিন্তু মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করায় তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। এরপর বন্ধুদের সহায়তায় বাবার লাশ পাশের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন তিনি।
গতকাল শনিবার বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে গিয়ে আবুল হাসান এ কথা বলেন। এর আগে পুলিশের কাছেও হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। আদালতে তিনি দাবি করেন, খুন করার উদ্দেশ্যে নয়, ভয় দেখাতেই বাবাকে আঘাত করেছিলেন তিনি।
ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মধুগ্রামের বাসিন্দা ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাবুর্চি আবুল কালাম ৪ জানুয়ারি বিকেলে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে পুলিশ তাঁর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত আবুল কালামের বোন বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ নিহত আবুল কালামের স্ত্রী রেখা আক্তার ও ছেলে মো. আবুল হাসানকে আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ছেলে হাসান তাঁর বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাবাকে সামান্য শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। ৪ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টার পর চার বন্ধু একত্রিত হয়ে বাবাকে ভয় দেখানোর জন্য একটি পাইপ দিয়ে আঘাত করেন। আঘাত তাঁর মাথায় লাগে। তখন তাঁর বাবা পড়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে যান। পরে বুঝতে পারেন, বাবা মারা গেছেন। এরপর হাসান ও তাঁর বন্ধুরা গভীর রাতে বাবার মৃতদেহ তাঁর চাচার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেন।
গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে গিয়ে আবুল হাসান বলেন, বাবাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর। মা ও ছোট ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে বাবা সব সময় খারাপ আচরণ করতেন এবং কারণে-অকারণে সবাইকে অমানুষিকভাবে মারধর করতেন। বাবার নির্যাতনে পরিবারের সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন।
এই ঘটনায় জড়িত চারজনের মধ্যে হাসানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বিচারিক হাকিম আদালতে গ্রেপ্তার অপর আসামি ইমাম হোসেন ওরফে রহিমও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মোর্শেদ বলেন, নিহতের ছেলে মো. আবুল হাসান ও তার বন্ধু ইমাম হোসেন ওরফে রহিমও হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত হাসানের অপর দুই বন্ধু পলাতক রয়েছেন। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে।