বাগেরহাটে পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর অভিযোগ
বাগেরহাটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে গ্রেপ্তার এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে পিবিআই বলছে, তাদের হেফাজতে নয়, হাসপাতালে মারা গেছেন ওই তরুণ।
নিহত ওই তরুণের নাম রাজা ফকির (২০)। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার হজরত খানজাহান (রহ.) মাজারের দিঘির পূর্ব পাড়ে। ওই মাজারে এক বছর আগে এক কিশোরকে ছুরি মেরে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, রোববার রাতে পটুয়াখালী থেকে রাজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজার মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনেরা হাসপাতালে যান। সে সময় রাজার বাবা ফকির আল মর্তুজা ওরফে বাবু ফকির সাংবাদিকদের কাছে তাঁর ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো ছুরি মারছে। ওই হত্যায় জড়িত, ভিডিওতে দেখা গেছে। তাকে ধরে আনা হলো। আদালত তার বিচার করত। নির্যাতন করে কেন মেরে ফেলা হলো?’ রাজার বাবার দাবি, ‘রাজা পটুয়াখালীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। সেখান থেকে আনার পথে ওর ওপর নির্যাতন করা হয়। বাগেরহাটে এনেও নির্যাতন চালানো হয়। বাদী পক্ষের সহায়তায় পুলিশ আমার ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
রাজা ফকির হাসপাতালে ভর্তি ছিল কিনা জানতে চাইলে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ওই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পিবিআইয়ের সদস্যরা। সে সময় দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত দেখতে পান। ওই তরুণকে নিয়ে আসা পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসককে জানিয়েছিলেন যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সোমবার রাতেই তাঁর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।
এ বিষয়ে পিবিআই বাগেরহাট কার্যালয়ের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ওই কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার দাবি, রাজা পুলিশ হেফাজতে মারা যাননি। তাঁর ওপর কোনো নির্যাতনও হয়নি। এক বছর ধরে তিনি পলাতক ছিলেন। পটুয়াখালী থেকে তাঁকে বাগেরহাটে নিয়ে আসার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আমার ছেলে তো ছুরি মারছে। ওই হত্যায় জড়িত, ভিডিওতে দেখা গেছে। তাকে ধরে আনা হলো। আদালত তার বিচার করত। নির্যাতন করে কেন মেরে ফেলা হলো?
গত বছরের ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় হজরত খানজাহান (রহ.) এর মাজার এলাকায় ছুরিকাঘাতে পাশের সিঙড়া গ্রামের তালিম মল্লিক (১৮) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হন। রাজা ফকির এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন।