বাউল উৎসবের আয়োজক খুনের সূত্র উদ্ঘাটন হয়নি

চুয়াডাঙ্গার আকন্দবাড়িয়ায় বাউল উৎসবের আয়োজককে খুনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্বৃত্তরা এবার পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে ওরস মাহফিলে হামলা চালিয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে দরবার-এ সো-য়াদ শরিফে ঢুকে আলো নিভিয়ে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গায় বাউল উৎসব চলাকালে উৎসবস্থলের কাছেই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক জাকারিয়া হোসেন ওরফে জাকির (৩০) খুনের সূত্র উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় আটক একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক রাশেদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
ওরসে হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন হাটকালুগঞ্জের আরিফ হোসেন (২০), রফিকুল ইসলাম (২২), জামেলা খাতুন (৪৫) ও তাঁর ছেলে সেলিম হোসেন (২৫)। দুর্বৃত্তরা হামলার পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। উপস্থিত লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মশিউর রহমান জানান, সেলিমের কানের পাশে কেটে গেছে। তাঁকে ভর্তি ও বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ওরসের অন্যতম আয়োজক মনির হোসেন জানান, হাটকালুগঞ্জ দরবার-এ সো-য়াদ শরিফে হজরত গোলাম মোস্তফা রহমতউল্লাহর চতুর্থ ওফাত দিবস উপলক্ষে ওরস চলছিল। রাত আটটার পরপরই অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দরবারে ঢুকে জেনারেটর বন্ধ করে দেয়। অন্ধকারের মধ্যে তারা কয়েকজনকে খুঁজতে থাকে। এরপর এলোপাতাড়ি মারধর করলে চারজন আহত হন।
জানতে চাইলে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ওরসের ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। বিস্তারিত জানেন না।
জাকারিয়া খুনের ঘটনায় তাঁর বড় ভাই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকন্দবাড়িয়া গ্রামের কিবরিয়া হোসেন বাদী হয়ে গতকাল রাতে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের আসামি এবং ভ্যানচালক মেহেরপুর সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের রাশেদকে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় আকন্দবাড়িয়া গ্রামে বাউল উৎসবের অদূরে প্রধান আয়োজক জাকারিয়াকে দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুন করে। জাকারিয়া বাড়ি থেকে রাশেদের ভ্যানে করে উৎসবস্থলে যাওয়ার সময় খুন হন। জাকারিয়ার প্রয়াত বাবা ফকির ফজলু শাহ চুয়াডাঙ্গার সুপরিচিত বাউলশিল্পী ও সংগঠক ছিলেন। বাবার মৃতুর পর বাউল উৎসব আয়োজনের সামগ্রিক তদারকি করতেন জাকারিয়া।
আজ মানববন্ধন: জেলা বাউল কল্যাণ সংস্থা জাকারিয়া খুনের প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন শেষে তাঁরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেবে। গতকাল সন্ধ্যায় সদর উপজেলার শৈলগাড়িতে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে কার্যকরী কমিটির সভা থেকে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হয়।
আতঙ্ক: এদিকে দুই দিন আগেও আকন্দবাড়িয়া গুচ্ছগ্রামের ফকির বাগান বাউলদের পদচারণে মুখর থাকলেও গতকাল সেখানে কেউ যায়নি। আশপাশেও বাউলদের দেখা যায়নি।
নিহত জাকারিয়ার বড় ভগ্নিপতি মীরচাদ আলী বলেন, সহজ-সরল ছেলেটিকে কারা কী কারণে খুন করল, তা অনুমানও করা যাচ্ছে না। কারণ, তাঁর সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। বড় ভাই কিবরিয়া হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইকে কারা ও কেন খুন করল, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
অন্ধকারে পুলিশ: সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক রাশেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার কারণ বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেও পরিষ্কার করে কিছুই জানাতে পারেনি। শুধু বলেছে, খুনিরা দল বেঁধে এসে তাঁর চোখে টর্চলাইট জ্বেলে ভ্যান থামাতে বাধ্য করে। এরপর চড়-থাপড় মেরে তাঁকে চলে যেতে বলে এবং জাকারিয়াকে কুপিয়ে খুন করে।
চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. ছুফিউল্লাহ বলেন, জাকারিয়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক চৌকস কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।