বরিশালে সন্ধ্যা হলেই সুইমিংপুলে চলে মাদকসেবন

২৩ বছর ধরে পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল সুইমিংপুলটি পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত হওয়ায় সন্ধ্যার পর সেখানে মাদকসেবীরা আড্ডা দেন।

নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বরিশাল সুইমিংপুল। গতকাল নগরের চাঁদমারী–সংলগ্ন এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

সাঁতারু তৈরি ও সাঁতার শেখার জন্য বরিশালে প্রায় ২৩ বছর আগে সুইমিংপুল নির্মাণ করেছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা। অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে নির্মাণের পর থেকেই এটি অচল। তবে এত দিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় জায়গাটিতে আনাগোনা বেড়েছে মাদকসেবীদের। মূলত, মাদকসেবনের মতো নেতিবাচক বিষয়গুলো থেকে তরুণদের দূরে রাখতে খেলাধুলার স্থান নির্মাণ করা হলেও বরিশাল সুইমিংপুলটি সে কাজে আসছে না।

নগরের চাঁদমারী এলাকায় ওই সুইমিংপুল। পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে গেছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় বরিশাল স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে এটি নির্মাণ করা হয়। স্টিলের পাতের বাক্স দিয়ে সুইমিংপুলের কূপে (বেসিন) ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণের সময় তা দেওয়া হয় কাঠের বাক্স দিয়ে। এতে ঢালাই ভালোভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে কূপে পানি তুলতে গেলে তো ফেটে যায়। সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না করেই দুটি পানির পাম্প বসানো হয়। এটিও কাজে আসেনি।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সুইমিংপুলটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। চারপাশে আগাছা জন্মেছে, দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। টাইলসও নষ্ট হয়ে গেছে। এ সময় এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত সুইমিংপুল এলাকাটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়। পুরো এলাকাটি অন্ধকার থাকায় মাদকসেবীরাও নির্বিঘ্নে মাদক সেবন করেন।

এদিকে জেলার একমাত্র সুইমিংপুলটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই দক্ষ সাঁতারু তৈরি হচ্ছে না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার দপ্তর সম্পাদক মাইনুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরই জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় বরিশাল থেকে কয়েকজন অংশ নেন। কিন্তু পদক অর্জনের রেকর্ড নেই। একজন কোচ আছেন, তিনি স্থানীয় বিভিন্ন পুকুরে প্রশিক্ষণ দেন। এ অবস্থায় দক্ষ সাঁতারু তৈরি করা সম্ভব নয়।

বরিশালের কয়েকজন ক্রীড়াবিদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের একমাত্র সুইমিংপুলটি পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় সাঁতারুদের অনুশীলনে ভাটা পড়েছে।

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই সুইমিংপুলটি কোনো কাজে আসেনি। এটি ব্যবহারের উপযোগী করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এখন বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে মতামত দেওয়া হবে।