ফরিদপুরে বরকত-রুবেলের আরেক সহযোগী যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
ফরিদপুরে আসিবুর রহমান ওরফে ফারহান (৪০) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ৩টার দিকে শহরের পূর্ব খাবাসপুর লঞ্চঘাট এলাকার বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসিবুর শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের আগে দীর্ঘ ১১ বছর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে কোনো ছাত্র সংসদ ছিল না। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আসিবুর রহমান ও তাঁর বন্ধু ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাইন কলেজের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁরা রুকসু ভবনে থেকে ছাত্র রাজনীতি পরিচালনা করতেন। নির্বাচিত সংসদের ভিপি, জিএস না হয়েও তাঁরা সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতেন।
ফরিদপুর-৩ আসনের (সদর) সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুর শহরসহ আশেপাশের যেসব জায়গায় সভা–সমাবেশ করতেন, সেখানে আসিবুর ও ফাহাদ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নিয়ে যেতেন শ্লোগান দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে আসিবুর শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পদাক ও ফাহাদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এই দুই বন্ধুর মধ্যে আসিবুর সাংসদের ভাই খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবরের অনুসারী এবং ফাহাদ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাংসদের এপিএস এইচ এম ফোয়াদের অনুসারী।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরিদপুরে সোনালী ব্যাংকের কাছে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মারা যান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক নার্স। এই ঘটনার সঙ্গে আসিবুর র ক্যাডার বাহিনী জড়িত—এমন বিষয় প্রমাণিত হওয়ার পর আসিবুর আত্মগোপন করেন।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, আসিবুর রকে ঢাকার কাফরুল থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আজ জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরে তাঁকে ফরিদপুর জেলখানা থেকে নিজেদের জিম্মায় নেবে সিআইডি ঢাকা।
এই মামলায় আরও দুজন গত শুক্রবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেবি (৬১) ও জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন (৫৪)। গত শুক্রবার দুপুরে নাজমুলকে তাঁর শহরের চরকমলাপুরের বাড়ির সামনের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই দিন বিকেলে শহরের হাড়োকান্দি এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিল্লাল হোসেনকে। তাঁকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে বিল্লালকে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফরিদপুরের জেল সুপার আব্দুর রহিম আজ দুপুরে জানান, নাজমুল ইসলাম ও বিল্লাল হোসেন বর্তমানে জেলা কারাগারেই আছেন।
প্রসঙ্গত, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করে সিআইডি। সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে গত ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করেন। এই মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। তাঁরা দুই ভাই সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী।
সিআইডি এই মামলায় দুই ভাইয়ের ১০ দিন করে রিমান্ড চান। গত ১৩ জুলাই ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে রিমান্ড শুনানি হয়। ওই সময় ফরিদপুর কারাগার থেকে শুনানিতে অংশ নেন দুই ভাই। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৯ জুলাই ভোরে সিআইডি দুই ভাইকে ফরিদপুর জেলখানা থেকে তাদের জিম্মায় নেন। তাদের ঢাকার সিআইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দুই দিন রিমান্ড শেষে সিআইডি গত ২১ জুলাই আবার তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২৪ জুলাই মোট পাঁচ দিন রিমান্ড শেষ হওয়ার পর রুবেল ও বরকত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডির সহকারি পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, দুই ভাই ‘যাদের আশ্রয়–প্রশ্রয়ে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন’ তাদের সবার নাম উল্লেখ করেছেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নাজমুল হাসান, বিল্লাল হোসেন ও আসিবুর রহমানকে মানি লন্ডারিং মামলায় সিআইডির চাহিদা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। সুবল সাহার বাড়ি শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লা বাড়ি সড়কে অবস্থিত। এ ঘটনায় গত ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। গত ৭ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সাজ্জাদ, ইমতিয়াজসহ মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় বর্তমানে মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।