দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই নয় মাসে প্রতিদিন গড়ে তিনটির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নয় মাসে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মনে করেন, ‘যদি আইনের শাসন বড্ড দুর্বল হয়ে যায় তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকে। দেশে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে গেছে। দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণ হলো প্রভাবের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার আইনের শাসনকে কোনঠাসা করে ফেলেছে।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রাবাস দখল করে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিতি ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। এ পর্যন্ত অভিযুক্তদের সকলেই ধরা পড়েছেন। এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণীর ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পরপরই নোয়াখালীর এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। আজ এ পর্যন্ত মোট চারজন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে। ওই নারী নয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন।
আসকের হিসাবে চলতি বছর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন নারী। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।
আসকে তথ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী এবং ছয় পুরুষ নিহত হয়েছেন।
গত নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে জুন মাসে। এ মাসে ১৭৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই মাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৩৯টি। নয় মাসের এ সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি।
আসক জানায়, এ সময়কালে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।
আসকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর এবং চলতি বছর ধর্ষণের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অপরাধ করে নিস্কৃতি পাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এমসি কলেজসহ একের পর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।’
আসকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের তুলনায় গত বছরের (২০১৯) প্রথম নয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ছিল। গেল বছর এ সময়ে এক হাজার ১১৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।
আসকের তথ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী।