পদ্মায় বালুর নৌকা থেকে চাঁদা তোলে কারা?
কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে বালুবোঝাই নৌকা থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে মাঝিদের মারধর করা হচ্ছে। সারা দিনে শতাধিক নৌকা থেকে লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, তীরবর্তী প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদা আদায় করা হয়। মাঝিরা প্রাণভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে পারছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ও পাবনার সীমান্তে পদ্মা নদী। এই নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটা বালু তোলা হয়। সেই বালু বড় কার্গো ও ছোট নৌকায় বোঝাই করে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী মহালে নেওয়া হয়। পাবনা সদর উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী তারাপুর এলাকায় মোটা বালু বেশি উত্তোলন হয়। সেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক কার্গোযোগে মিরপুর এলাকায় বালু নেওয়া হয়। এ মহাল থেকে বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে বালু বিক্রি হয়। নদীপথে তারাপুর এলাকা থেকে মিরপুরের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী ও নৌকার মাঝি অভিযোগ করেন, তারাপুর এলাকা থেকে মিরপুর রুটে দুটি স্থানে প্রতিদিন শতাধিক বালুবোঝাই নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। নৌকাপ্রতি কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। পাবনা থেকে আসার সময় পদ্মা নদীর কুমারখালীর শিলাইদহ ও কয়া এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর হয়ে মিরপুর ঘাটে আসতে হয়। শিলাইদহ ঘাট ও কয়াঘাট এলাকায় চাঁদার টাকা আদায় হয়।
দুজন মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিলাইদহ ঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার ও কয়া এবং সদর উপজেলার হরিপুর সীমান্তে টাকা তোলা হয়। নদীর মধ্যে ছোট ছোট নৌকায় চাঁদা আদায়কারীরা অবস্থান করে। ওই এলাকা পার হওয়ার সময় বালুবোঝাই নৌকা থেকে তারা নৌকাপ্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। তারা সংখ্যায় দুই থেকে তিনজন থাকে। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রও থাকে। চাঁদার টাকা না দিলে তারা মারধর করে। এ ঘাটে ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি পালাক্রমে চাঁদা আদায় করে।
বালু ব্যবসায়ী সুমন এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, তাঁর দুটি ট্রলার আছে। প্রতিদিন পাবনা থেকে বালু নিয়ে আসেন। আসার সময় শিলাইদহ ও কয়াতে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। টাকা না দিলে মাঝিদের মারধর করা হয়। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না।
বালু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই বালুর দাম বেশি। তারপরও প্রতিদিন চাঁদা দিতে গিয়ে বালুর দর বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বেশি অর্থ দিয়ে এসব বালু কিনতে হচ্ছে। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে এসব টাকা তোলা হচ্ছে।
আশা নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁর চারটি ট্রলার থেকে প্রতিদিন চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। বড় ট্রলার থেকে ২ হাজার ও বাকিগুলো থেকে ১ হাজার করে চাঁদা নেওয়া হয়। এতে তাঁরই প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। দুই দিন চাঁদা দিতে না পারায় পরের দিন মাঝিদের মারধর করা হয়েছে।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকজন মাঝি এমন অভিযোগ করেছেন। শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান বলেন, পাবনা চরাঞ্চলে পদ্মা নদীতে সন্ত্রাসীদের প্রভাব রয়েছে। নদীর মধ্যে শিলাইদহ ঘাট এলাকায় চাঁদাবাজির খবর শোনা যায়।
কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করা হবে।’ কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিলাইদহ ও কয়া হয়ে বালুর নৌকা যায় এটা জানি। কিন্তু চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আজও পাইনি। এটা যদি হয়ে থাকে তবে খুবই গুরুতর অপরাধ। অভিযোগ পেলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে জানানো হবে।’