নারায়ণগঞ্জে সড়কে দখলদারদের রাজত্ব
ফুটপাতসহ পুরো সড়কই দখল করে নিয়েছেন গাছ ও ইট-বালু ব্যবসায়ীরা। সড়কেই চলে বাস–ট্রাক মেরামতের কাজ। সড়কবাতি থাকলেও জ্বলে না। সন্ধ্যার পর যৌনকর্মী, ছিনতাইকারী ও টহল পুলিশের হয়রানির অভিযোগ পথচারীদের। এসব কারণে চলাচলের উপযোগিতা হারাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ শহরের চারারগোপ মোড় থেকে ৫ নম্বর খেয়াঘাট সড়কটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের শুরুতে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে চারারগোপ মোড় থেকে ১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৯৫৫ মিটার দীর্ঘ সড়কটিতে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। এই সড়ক ধরেই ১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে যাতায়াত করে নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাওয়া শতাধিক বাস। ৫ নম্বর ঘাট থেকে ১ নম্বর ঘাট পর্যন্ত এলাকায় নদীপথে আসা সার, গম, চালসহ বিভিন্ন পণ্য এই সড়ক ধরেই ট্রাকে করে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন, ৫ নম্বর ঘাট হয়ে নদী পারাপার, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নির্মিত ওয়াকওয়ে এবং ৩ নম্বর ঘাট পাইকারি মাছবাজারে যেতে এই সড়ক ব্যবহার করেন নারায়ণগঞ্জবাসী।
১৭ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা গেছে, চারারগোপ মোড় থেকে এগিয়ে যেতেই আটরশি মসজিদসংলগ্ন মোড়ে মূল সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ইট–বালু ও চায়ের দোকান। ইট–বালুর স্তূপ শেষ হতেই সড়কের দুই পাশ ও ফুটপাতে সারি করে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি। সড়কের মধ্যে প্রায় ৫৮টি স্তূপে রাখা হাজারো গাছের গুঁড়ির পরপরই শুরু হয়েছে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ও ট্রাক মেরামতের কাজ। কোনো কোনো স্থানে বাসের ইঞ্জিন খুলে রাখা হয়েছে। পড়ে আছে স্টিলের বড় বড় পাত। বাধ্য হয়েই এসব বাস ও গাছের স্তূপের ফাঁকফোকর ও মূল সড়ক ধরে চলাচল করতে হয়।
পথচারীরা জানান, ফুটপাত দখলে থাকায় মূল সড়ক ধরেই চলতে হয় তাঁদের। এসব দোকানের পাশ দিয়ে বাস চলাচলের সময় পথের পাশে রাখা বালু উড়ে এসে চোখেমুখে পড়ে। মূল সড়কে চলতে গিয়ে কখনো কখনো ট্রাক–বাসের নিচে পড়ার উপক্রম হয়। বন্দর সিএসডি ঘাট থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে চারারগোপ ফলের আড়তে ব্যবসার কাজে আসেন মাহমুদ হাসান। প্রথম আলোকে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘দখলের কারণে সড়কে হাঁটা যায় না। বিপদ হয় সন্ধ্যার পর। একটি চক্র সড়কবাতিগুলো বন্ধ করে রাখে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে ফেলে। অন্ধকারে গাছের গুঁড়ি আর বাসের ফাঁকফোকর দিয়ে চলতে গেলেই পড়তে হয় ছিনতাইকারী আর টহল পুলিশের খপ্পরে। আমরা সাধারণত সন্ধ্যার পর এই সড়ক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।’ মাহমুদ হাসানের সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন রিকশাচালক জমির হোসেন। তাঁর অভিযোগ, দখলের কারণে সরু হয়ে যাওয়ায় সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই বাসের সঙ্গে রিকশার ধাক্কা লাগে। কখনো কখনো পথচারীদের গায়ে রিকশার চাকা লেগে যায়।
১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কথা হয় আসমা বেগম ও নাইমা আক্তার নামের দুজন পোশাকশ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, সড়কের পাশ দিয়ে রাতে চলতে গেলে কটূক্তি শুনতে হয়। তাঁদের ভাষায়, ‘পুলিশ খারাপ মেয়ে মনে করে’ হয়রানি করে।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন গাছের আড়তদার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মাসিক চাঁদা দিয়ে রেলওয়ের জমিতে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি ডাবল লেনের জন্য রেলওয়ের জমি দখলমুক্ত করা হলে সড়কেই গাছের ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। বিকল্প জায়গা পেলে সড়ক থেকে গাছের ব্যবসা সরিয়ে নেবেন বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ও রেলওয়ের সহায়তা পেলে সড়কটি দখলমুক্ত করা সম্ভব। এই সড়ক এবং আশপাশের এলাকাজুড়ে একটি ‘ক্রাইম জোন’ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর আনসার সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি দ্রুত সড়কে আলোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
টহল পুলিশের বিরুদ্ধে পথচারীদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ওই এলাকা থেকে টহল পুলিশ নিয়মিত ছিনতাইকারী ও যৌনকর্মী আটক করে। সড়ক দখলমুক্ত হলে এবং আলোর ব্যবস্থা করা হলে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।