নটর ডেমের শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া গাড়ির ‘চালক’ ধরা পড়েনি
নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাঁর নাম হারুন অর রশিদ। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন চালকের সহযোগী রাসেল খান।
ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বুধবার রাতে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হারুন অর রশিদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর গুলিস্তানে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান (১৭) মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাঈম হাসান উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দক্ষিণ সিটির পরিবহন বিভাগ সূত্র বলছে, যে গাড়ির চাপায় নাঈম হাসান নিহত হয়েছেন, সেটি ভারী যান। সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহারের জন্য এমন ৩১৭টি ভারী যান আছে। কিন্তু চালক আছেন মাত্র ৮৬ জন। রেওয়াজ অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে যাঁদের লাইসেন্স আছে, তাঁরা গাড়িগুলো চালাচ্ছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটির একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, নাঈমকে চাপা দেওয়ার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান চালক হারুন অর রশিদ। তবে তাঁর সহযোগী রাসেল খান পালাতে পারেননি। রাসেল দৈনিক মজুরি হিসেবে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি করপোরেশনের স্থায়ী বা অস্থায়ী কর্মী নন।
অবশ্য দক্ষিণ সিটি জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী সরকারি গাড়ি যে কেউ চালাতে পারেন না। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোটি টাকার দামি গাড়ি চালাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। অবশ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, চালক সংকটের কারণেই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা কর্মীদের দিয়ে সরকারি গাড়ি চালানো হচ্ছে।
এর আগেও সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সব৴শেষ গত এপ্রিল মাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচায় ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক রিকশাচালক নিহত হন। আহত হন ওই রিকশার যাত্রী। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ময়লার গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এদিকে নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থার প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈমকে। অপর দুই সদস্য হলেন পরিবহন শাখার মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস ও যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান। দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের প্রথম আলোকে জানান, কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি চান মেয়র তাপস
নাঈম হাসানের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে বুধবার রাতে নগরীর কামরাঙ্গীরচরের জাওলাহাটি এলাকায় যান ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও দুই সন্তান। নিজেই উপলব্ধি করি, এটা কী রকম বেদনাদায়ক-মর্মান্তিক ঘটনা! এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’ সন্তানহারা পিতা-মাতাকে সান্ত্বনা দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দোষী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি চান উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘এ রকম গাফিলতি, কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। আমরা এরই মধ্যে করপোরেশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া আরম্ভ করেছি। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি এবং এরই মধ্যে তাদের চিহ্নিত করেছি।’ দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা–ও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।