নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভাঙচুর, এক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার অংশ হিসেবে নেওয়া ব্যবহারিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানানো হয়।
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একটি সুপারিশ ভর্তি পরীক্ষা কমিটি না রাখায় গতকাল রাতে ওই বিভাগে ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ই’ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তিনি ফিরে এলে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ময়মনসিংহে চলা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গত মঙ্গলবার পরীক্ষা শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অভিনয়সহ বিভিন্ন বিষয়ের পরিবেশনা থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত চলে। ওই দিন ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি রাজবাড়ীতে। ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় তিনি সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি। দেরিতে পৌঁছায় ওই শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার আর পরীক্ষায় অংশ নিতে যাননি। রাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকেন। পরে গতকাল বুধবার সকালে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিতে যান।
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা ‘ই’ ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত। ওই ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ওই শিক্ষার্থীকে জানান যে, নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী তাঁর জন্য নির্ধারিত দিনে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে পরের দিন আর কোনো সুযোগ থাকে না। পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে বিষয়টি জানান। ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলামকে অনুরোধ করেন তিনি যেন ‘ই’ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে অনুরোধ করেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাকিবুল শিক্ষকদের অনুরোধ করলেও ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এরপর রাকিবুল চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের গালাগাল দেন এবং জানালার কাচ ভাঙচুর করেন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রাত ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকেরা অনেক নিয়ম ভাঙেন। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে একজন শিক্ষার্থী সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় তাঁর পরীক্ষা না নেওয়া ঠিক হয়নি।
এ ঘটনায় ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা জরুরি সভা করে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। পরে রাত ১১টার দিকে স্থগিতের সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জালাল উদ্দিনকে জানালে তিনি ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে সারা রাত কেঁদেছেন। সকালে ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই শিক্ষার্থীকে কাঁদতে দেখে আমার কাছে আসেন। আমি সবার অনুরোধে শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ নিয়ে যাই। কিন্তু অনুরোধ রাখা না হলে আমি ফিরে আসি। ভাঙচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার ধর বলেন, ভাঙচুরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।