ধান বিক্রির টাকা যাচ্ছে যাত্রা ও জুয়ার আসরে

ধান বিক্রির টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া গ্রামের কৃষক জয়নাল আলী। গোবিন্দপুর গ্রামে রাস্তার পাশে জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেখানে চলছিল গুটিখেলা। কিছুক্ষণ দেখে আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় তিনিও খেলতে শুরু করেন। প্রথম দিকে কয়েকবার জিতেও যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব টাকা হেরে শূন্য হাতে বাড়ি ফেরেন জয়নাল।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামে-গঞ্জে এখন বসছে মেলার নামে এমন জুয়া, হাউজি ও যাত্রার আসর। ধান বিক্রির কাঁচা টাকা হাতে পাওয়া নানা বয়সী মানুষই এসব আসরের লক্ষ্যবস্তু। এসব মানুষ ওই আসরে গিয়ে দেদার টাকা খরচ করছে। সেই টাকা চলে যাচ্ছে আসরের আয়োজক গুটিকয়েক মানুষের হাতে।
ঠাকুরগাঁওয়ের আবদুর রশিদ মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চল কৃষিপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কৃষকের ধান ঘরে উঠে যায়। এ সময় তাঁদের হাতে থাকে ধান বিক্রির টাকা। আর সে সময় গ্রামে-গঞ্জে বসে সার্কাস, যাত্রা, হাউজি ও নানা জুয়ার আসর। এসব আসরে এসে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরে যান।
গত ১৩ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া (পশ্চিম) ইউনিয়নের রামনাথ এলাকায় শুরু হয়েছে আজাদ মেলা। মূলত পশু কেনাবেচার জন্য এ মেলা। কিন্তু গত কয়েক বছর এখানে পশু কেনাবেচা হয় দু-এক দিন। এরপর লটারি ও যাত্রার আসর চলে মাস খানেক।
অন্যদিকে গত শনিবার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক ওরস মেলা। এখানেও পশু কেনাবেচার পাশাপাশি চলে যাত্রা ও সার্কাস। পাশের পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় চলছে আলোয়খোয়া রাশ মেলা। এ মেলায় চলছে হাউজিসহ নানা ধরনের জুয়ার আসর।
সম্প্রতি হরিপুর উপজেলার গোবিন্দপুর, সদর উপজেলার আরাজী ফকদনপুর, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের খোলা জায়গায় বসেছে গুটিখেলা, কাটাখেলা, তিন তাসের খেলা, লটারিসহ নানা আসর। সেখানে ভিড় করে জুয়া খেলছে নানা বয়সী মানুষ। দু-একজন জিতলেও অধিকাংশ মানুষ হেরে বাড়ি ফিরছে।
ফকদনপুর গ্রামে গুটিখেলার আসরে জুয়া খেলতে দেখা গেল এক কিশোরকে। সে বলে, ‘বাবা ধান বিক্রি করেছেন। খরচের কথা বলে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখানে চলে এসেছি।’
ধনতলা গ্রামের কাটাখেলার আসরের উদ্যোক্তা কামাল হোসেন বলেন, প্রতিবছরই ধান কাটার মৌসুমে বিনোদনের জন্য এসব খেলার আয়োজন করা হয়। তবে খুব বেশি টাকার খেলা হয় না। আবার কেউ সব টাকা হেরে গেলে তাকে সম্মান দেখিয়ে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়। কম বয়সী কিশোরদের এসব আসরে খেলতে দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অনুমতি নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। অনুমোদন না নিয়ে মেলা বসালে বা কোথাও জুয়ার কার্যক্রম চালালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।