ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পাশে ছিল চিরকুট
মা–বাবাকে খুব ভালোবাসে। তবে ধর্ষণের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না—এমন কথা লেখা একটি চিরকুট ১৩ বছরের এক কিশোরীর বিছানার পাশে পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশ বলছে, আত্মহত্যা করার আগে সে এই চিরকুট লিখে রেখে যায়।
পুলিশ ও মামলার নথি থেকে জানা যায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসা থেকে গত ২৯ জানুয়ারি বিকেলে দুই বোন (একজনের বয়স ১৩, অন্যজনের ৭) বের হয়। মায়ের সঙ্গে রাগ করে বেরিয়ে যায় তারা। বড় বোন তার এক বান্ধবীকে (১৪) সঙ্গে নেয়। ঘুরতে ঘুরতে তিনজন জুরাইন এলাকায় চলে যায়। রাতে জুরাইনের বাসস্ট্যান্ডে একটি বাসে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। ভোররাতে বাস থেকে নেমে তারা জুরাইনের একটি দোকানের সামনে আসে। সেখানে তাদের সঙ্গে একজন নিরাপত্তারক্ষীর পরিচয় হয়। এরপর সেখানে রিকশায় করে আসে দুই কিশোর। তিনজনকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে রিকশায় করে তারা নিয়ে যায়।
কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার ছিল। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করল। যারা তাঁর অল্পবয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
দুই কিশোর শিশুসহ দুই কিশোরীকে কদমতলী এলাকার নির্মাণাধীন একটি ভবনের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আরও এক কিশোর ও শুভ (২৩) নামে এক যুবক ছিলেন। বান্ধবী ও বোনকে নিচে রেখে ১৩ বছরের কিশোরীকে দোতলায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে ১৩ বছর বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণ করে এক কিশোর। সকালে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী ও তার বোনকে রাজধানীর দনিয়া এলাকায় খুঁজে পান তাদের বাবা। দুই বোনকে বাড়ি নিয়ে যান বাবা।
এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে দুই কিশোর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনাটি মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক। কিশোরী ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুর রহমান
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই বোনের মধ্যে বড় বোন কদমতলী এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়। পরে ওই কিশোরী বাসায় ফিরে বিষপানে আত্মহত্যা করে। দুই কিশোর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। যে কিশোর ধর্ষণ করেছে, সে পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এক যুবক কারাগারে।
কিশোরীর বাবা একজন খুদে ব্যবসায়ী। মা গৃহিনী। বাবা প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। মায়ের সঙ্গে অভিমান করে তার দুই মেয়ে সেদিন বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। রাতে বাসায় না ফেরায় খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর আত্মীয়স্বজনসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। দুই মেয়েকে না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় যান সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে। পরে সকালে তিনি দনিয়া এলাকায় মেয়েদের খুঁজে পান।
মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, বাসায় ফেরার পর ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী বিষণ্ন ছিল। ৩১ জানুয়ারি বিকেলে বাবার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে বাসার বাইরে যায়। কিছুক্ষণ পর সে আবার বাসায় আসে। রাত আটটার সময় কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়। পরে সে মারা যায়। মেয়েটির বিছানার পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা লিখে রেখে যায়।
পুলিশ পরিদর্শক শাহীনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনাটি মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক। কিশোরী ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াবের ডিএনএ প্রোফাইলিং করার জন্য পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে দুই আসামি জবানবন্দিতে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে।
কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার ছিল। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করল। যারা তাঁর অল্পবয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।