থানা হাজতে একজনের মৃত্যু, পরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক বরখাস্ত
বরগুনার আমতলী থানা-হাজতে আটক একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে থানা থেকে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ব্যক্তির পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সানু হাওলাদার (৫০)। এ ঘটনায় আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও কর্তব্যরত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি।
মৃত সানুর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত বছরের ৩ নভেম্বর ইব্রাহিম হোসেন নামে একজন কৃষককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলায় সানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি। ওই মামলায় সানু হাওলাদারকে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটক করে আমতলী থানা-পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি, ‘সানুও ওই হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি। একই সঙ্গে ২০০৩ সালের অপর একটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সানু।’
মৃত সানুর পরিবারের অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে সানু হাওলাদারকে আটক করার পর তাঁকে আমতলী থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। একপর্যায়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি তাঁদের কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই টাকা দিতে অপারগতা জানালে সানু হাওলাদারকে থানা-হাজতে রেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন চালায়। এ বিষয়ে সানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন বলেন, বুধবার পরিবারের লোকজন থানায় এসে তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে বাবার মৃত্যুর খবর পান।
ওসি আবুল বাশারের দাবি, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে আসামি সানু হাওলাদার শৌচাগারে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে তিনি পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে এসে ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবির বিষয়ে ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘এটা অসত্য। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ নির্যাতনে মারা যাওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
সকালে সানু হাওলাদারের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর স্বজনেরা থানা ফটকের সামনে গিয়ে আহাজারি করেন।
খবর পেয়ে বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আমতলী থানা যান। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এবং আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী মৃত সানু হাওলাদারের লাশের সুরতহাল করেন। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা যাবে না।’
পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ টাকা না পেয়ে নির্যাতন করেছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি সব বিষয়ই খতিয়ে দেখবে। অপরাধী যেই হোক নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কোনো ধরনের গাফিলতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।